
আন্তোনিও গুতেরেস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মহাসচিব চারদিনের বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামী মাসে বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন সংস্থাটির মহাসচিব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মহাসচিব এই সফর করছেন।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পৌঁছে দেন। এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাবের পাশাপাশি রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রফেসর মু. ইউনূসের চিঠির জবাবে এই উদ্বেগের সঙ্গে নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন গুতেরেস।
পাল্টা চিঠিতে গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘ।’ রাখাইনের জনগোষ্ঠীকে মানবিক ও জীবিকা সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি জাতিসংঘ অগ্রাধিকার দেবে বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি লেখেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৭ ফেব্রুয়ারি মহাসচিবের সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা করে সেটি হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক ‘হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ’ খলিলুর রহমান। এর জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের লেখা চিঠির একটি অনুলিপি বুধবার গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের দৃঢ় সংহতি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন সংস্থাটির মহাসচিব।
তিনি লেখেন, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাবের পাশাপাশি রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আপনার উদ্বেগের সঙ্গে আমি একমত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘ।
আমি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরিসহ মিয়ানমারের সৃষ্ট সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আঞ্চলিক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়া ন্যাশনস (আসিয়ান) এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য দেশটিতে আমার বিশেষ দূতের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল কীভাবে রাখাইনের জনগোষ্ঠীকে মানবিক ও জীবিকা সহায়তা বাড়াতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতার জন্য এরই মধ্যে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মহাসচিব গুতেরেস। তিনি বলেন, রাখাইনসহ পুরো মিয়ানমারের সংকটপূর্ণ এলাকায় মানবিক সহায়তা যেন নিরাপদ, দ্রুত, টেকসই ও নির্বিঘœ হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বদ্ধপরিকর। এজন্য জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী এবং মিয়ানমারে অবস্থিত জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত থাকার ওপর গুরুত্ব দেবে।