
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম বলেন,আবেদনের পর্যায়ে থাকা দাবি দাওয়া আন্দোলনের পর্যায়ে গেলে তা হবে আরেকটা জাতীয় দুর্ভাগ্য।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে আজ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি গ্রহণ করে। শিল্প কারখানার বয়লার ও জেনারেটরে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শুনানিতে উপস্থিত জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম এ প্রস্তাবকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যায়িত করে বলেন,“এখন পর্যন্ত এইসব দাবি জনগণের পক্ষ থেকে আবেদনের পর্যায়ে আছে। সরকার ও বিইআরসি-কে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে এটি আন্দোলনের পর্যায়ে না যায়। যদি তা হয়, তাহলে এটি হবে জাতীয় দুর্ভাগ্য।”
তিনি বলেন,“আমরা বিআরসি-কে তিন দিন সময় দিয়ে জানাবো।এই তিন দিনের মধ্যে বিআরসি সবকিছুই করবে। আগামী রবিবারে বিআরসি সরকারকে এ বিষয়ে জানাবে। বিআরসি-র আইনের আওতায় সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বিআরসি সেটি পরামর্শ দেবে, এবং পাশাপাশি এই কাজগুলো বিআরসি করতে পারে সরকারের সঙ্গে আনঅফিশিয়ালি।”
শুনানিতে এম শামসুল আলম বলেন, “৩৪০০ কোটি টাকা বাড়ানোর জন্য শিল্পের ৩০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করার যে প্রস্তাব,তা ভয়ঙ্কর রকম গণবিরোধী। শুধুমাত্র সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ নেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “পেট্রোবাংলা ও কোম্পানিগুলো যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে, তা ভুল। ২০০৩ সালে যখন সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, তখনই বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ব্যবসায়িকভাবে পরিচালিত হবে। সেই সময় এক ছাত্র প্রশ্ন করেছিল-‘আমরা তো সেবা দিতে শিখেছি, ব্যবসা করবো কিভাবে?’ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে এসে কর্মকর্তারা শুধু ব্যবসা শিখেছে!”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এখন কর্মকর্তারা এত বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে যে, তারা জনগণের স্বার্থের কথা ভাবেন না। ১৫% ভ্যাট আমদানি পর্যায়ে তুলে নেওয়াটা অবৈধ। আদালতের শুনানিতেই এটি বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি এটি বাতিল হয়, তাহলে ৩৪০০ কোটি টাকা নয়, বরং ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, যা গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে পারে।”
শুনানিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সরকারের উচিত অবিলম্বে এই প্রস্তাব বাতিল করা। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি রবিবার অথবা সোমবারের মধ্যে খারিজ করা উচিত।”
তারা আরও বলেন, “সরকার চাইলে বিদ্যমান মূল্যহার কতটা কমানো যায়, সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করতে পারে। জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত এবং বিইআরসি- আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।"
এম শামসুল আলম বলেন, “বিইআরসি- যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে আদালতে যাওয়ার বিকল্প থাকবে না। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব কেবলমাত্র কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে, যা জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।”
সূত্র:https://tinyurl.com/yc2cz5eu
আফরোজা