ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

মাঠে থেকে কাজ করার ইচ্ছা

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র দেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি অন্তবর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছি। একই সঙ্গে অন্যান্য যেসব কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম সেখান থেকেও আজকে পদত্যাগ করেছি।’ উপদেষ্টা পরিষদের তার স্থলে কে দায়িত্ব নেবেন, এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব কে নেবেন, সেটা ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন। 
গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হচ্ছে। নাহিদ ইসলাম এই দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর সে কারণে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল।

আগামী শুক্রবার নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠন হচ্ছে, সেখানে যুক্ত হওয়ার অভিপ্রায় আছে বলেও জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অন্যতম এই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেই। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করা আমাদের কাছে মনে হয়েছিল যৌক্তিক। গত সাড়ে ছয় মাসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কাজ করছে। হয়তো আমরা আশানুরূপ ফল এখনো পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সরকারে একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের যে আকাক্সক্ষা করি, সে আকাক্সক্ষার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে, সেই শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করছি সরকারের থেকে সরকারের বাইরে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যে আমাদের সহযোদ্ধরা রয়েছে তারাও এটি চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকে মূলত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘গত ৬ মাসে আমি চেষ্টা করেছি আমার দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার। মন্ত্রণালয়ে আমরা কিছু কাজ করেছি। তার ফল সামনে হয়তো দেখা যাবে। ছয় মাস খুবই কম সময়, তারপরও আমি চেষ্টা করেছি। আজকে থেকে আমি সরকারের আর কোনো দায়িত্বে নেই।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘আমার পরে কে দায়িত্ব নেবে সেটা উপদেষ্টা পরিষদই ঠিক করবে। আমি আমার জায়গা থেকে মনে করেছি, আমাকে বাইরে প্রয়োজন। এখনো আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি। বিচার এবং সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছিল, ছাত্ররা এসেছিল, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে অন্য যে দুজন রয়েছেন, তারা মনে করছেন সরকারে তাদের এখনো দায়িত্ব রয়েছে। তারা এখনো সরকারে থেকেই জনগণকে সার্ভ করবেন। তারা যদি রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করেন, তখন হয়তো সরকার ছেড়ে দেবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি এবং দল গঠন হচ্ছে, সেখানে অংশগ্রহণ করতে আমার অভিপ্রায় আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং আমাদের যে গণঅভ্যুত্থান, এর যে প্রতিশ্রুতি সেটা বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষেই আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা তো ছিলই।

আমরা সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করেছি সবসময় এবং এখানে সীমাবদ্ধতা ছিল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল, আমরা এসে এই ব্যুরোক্রেসিকে যেভাবে পেয়েছি, এখানে পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হয়েছে আন্দোলনের পরে এবং একইসঙ্গে জুলাইয়ের যারা গণহত্যাকারী তাদের গ্রেপ্তার, বিচারের বিষয়টা, সে বিষয়ে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ করেছি’, বলেন তিনি।
পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন নাহিদ ইসলাম ॥ প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে নাহিদ উল্লেখ করেন- ‘মহোদয়, আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।  বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগ দানের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’ 
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার  নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি।’ 
নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন, এমতাবস্থায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।’
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্রতিক্রিয়া ॥ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সদ্য উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে লিখেছেন, ‘সহকর্মী, সহযোদ্ধার সঙ্গে সরকারে শেষ দিন। আগামীর যাত্রা শুভ হোক।’
মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে নাহিদ ইসলামকে শুভকামনা জানান তিনি।

×