
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্টে সারাদেশ থেকে আরও ৫৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুরু করে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১৭ দিনে এ নিয়ে মোট ৯ হাজার ২৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো ডেভিল হান্ট অপারেশনে।
সোমবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর অন্যান্য মামলা ও ওয়ারেন্টের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৫৪ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৫৪৩ জনকে।
২৪ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্টে যত অস্ত্র উদ্ধার ॥ বিদেশী পিস্তল একটি, কাঠের বাটযুক্ত পিস্তল একটি, ম্যাগাজিন তিনটি, ৭.৬৫ গুলি ১২ রাউন্ড, মালবাহী ট্রাক একটি এবং ২৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয় বলে জানান এআইজি ইনামুল হক সাগর।
এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মী, চট্টগ্রামে ১৯, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ নেতা, নওগাঁর পোরশায় আওয়ামী লীগ নেতা এবং গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার।
চট্টগ্রাম ॥ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী, পরিকল্পনাকারী, সহযোগী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রয়েছেন। রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
সিএমপির জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর কোতোয়ালি, চকবাজার, বাকলিয়া, সদরঘাট, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, হালিশহর, পাহাড়তলী, আকবর শাহ, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও কর্ণফুলী থানা এলাকায় এসব অভিযান চলে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন মো. ইমন, জসিম উদ্দিন সিকদার, রিদুয়ানুল ইসলাম, নুর কবির, মো. শুক্কুর মিয়া, মাহী সায়েদ, সুমন দাশ, মো. সাইমন, মো. শাহীন, মো. ইমরান, মো. আজাদ বিশ^াস, নাসির বিশ^াস, মৃদুল চন্দ্র দে, রূপম দে, মীর মোহাম্মদ আহনাফ আরেফিন, জসিম উদ্দিন, ডা. মাওলানা ইউনুস ওহীদ, ইমরান আলী মাসুদ ও মনসুর আলী।
পুলিশ জানায়, এরমধ্যে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান আলী মাহমুদ ও ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মনসুর আলীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল ॥ ভূঞাপুরে ডেভিল হান্ট অভিযানে ইসমাইল হোসেন ওরফে ইকো মিয়া নামে যুবলীগ নেতাকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ ।
পৌরএলাকার ফসলান্দি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ইকো মিয়া উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শুশুয়া গ্রামের মৃত আ. মান্নানের ছেলে।
নওগাঁ ॥ জেলার পোরশায় সাজ্জাদ সরকার (৪৬) নামে এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে নিতপুর বাংগালপাড়া নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। আটক সাজ্জাদ মৃত সামাদ সরকারের ছেলে এবং নিতপুর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে থানায় নাশকতার মামলা রয়েছে। তাকে সোমবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গাইবান্ধা ॥ জেলায় পৃথক ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাতে গাইবান্ধা শহরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তালুকদার জানান, গ্রেপ্তার মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা (৫০)।
তিনি শহরের খানকা শরীফের মৃত মোখলেছার রহমানের ছেলে। অপরজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গাইবান্ধা জেলা শাখার সহসভাপতি খন্দকার তানভীর আহমেদ (৩০) শহরের সদর হাসপাতাল রোডের খোকা মিয়ার ছেলে।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তালুকদার জানান, ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনই এজাহারভুক্ত মামলার আসামি। সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ॥ ডেভিল হান্ট অভিযানে জেলায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস জানান, রবিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের বাসিন্দা জেলা শ্রমিক লীগের কার্য নির্বাহী সদস্য ও সদর উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (৫৪), জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য শফি আলম (৫০), দর্শনা রামনগর গ্রামের জাফিকুল ইসলামের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী রাসেল (২৪), দামুড়হুদা কাদিপুর গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে দামুড়হুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম (৪৫), আলমডাঙ্গা উপজেলার চিলাভালকী গ্রামের বাসিন্দা নাগদাহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত আলী (৫৭) এবং একই ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মক্কেল আলি (৫৭)। এ নিয়ে গত ১৪ দিনে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।