ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

এদেশের সঙ্গে ভারত কেমন সম্পর্ক চায় সেটা তাদেরও ঠিক করা দরকার

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এদেশের সঙ্গে ভারত কেমন সম্পর্ক চায় সেটা তাদেরও ঠিক করা দরকার

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত কেমন সম্পর্ক চায় সেটা তাদেরও নির্ধারণ করা দরকার। আশপাশের মানুষের কথায় কান না দিয়ে দুইপক্ষকে সম্পর্ক ভালো করার পরামর্শ দেন তৌহিদ হোসেন।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এই সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে তা দুই পক্ষকেই ঠিক করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এর আগে রবিবার নয়াদিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য উৎসবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়। প্রতিদিন অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ একজন ওঠে এবং সবকিছুর জন্য ভারতকে দায়ী করেন, এমন সব বিষয়ের জন্য এই দোষারোপ করেন, যদি আপনি খবরগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন সেগুলো খুবই হাস্যকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ ঠিক করবে ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়, ভারতকেও ঠিক করতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দুই পক্ষেরই বিষয়। এখানে দোষের কিছু নেই।
উপদেষ্টা বলেন, তবে উনি (জয়শঙ্কর) কিছু বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্নজন বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলছে, সরকারের ভেতর থেকে। আমি এটা নিয়ে ন্যায়-অন্যায় উচিত-অনুচিত বিচার করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা হলো, এ রকম কথা আমাদের এখান থেকে বলছে, ওনাদের ওখান থেকেও বলছে।
পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে এখানে জাতিসংঘ ফোর্স পাঠিয়ে দেন। ওনাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহরহ বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি সম্পর্ক ভালো করা যায় কিনা, কাজেই আমাদের অবস্থান সেটাই। আশপাশ থেকে দু’চারজন কি বলল না বলল সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং আমাদের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর অভিযোগ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সম্পর্ক ভালো করতে গেলে আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যে ওখানে ভারতীয় আতিথেয়তায় থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন, এগুলো আসলে সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ওনার বক্তব্য যে সেটা আগুনে ঘি ঢালছে এটা তো স্বীকৃত ব্যাপার, এটা সবাই জানে।
ভারতীয় ভিসা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভিসা তাদের অধিকার। তারা কাউকে ভিসা না দিলে আমাদের কিছু বলার নাই। যখন ভিসা দেওয়া হচ্ছে না তখন আমরা তো বিকল্প খুঁজে নেব। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বিকল্প দেখতেই হবে।
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্পর্কে উনি আবার বলেছেন। এই অভিযোগ প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ার যে বিবৃত তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করেছে তার ভিত্তিতে এইগুলো বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশের বিষয়। ভারতের সংখ্যালঘুর বিষয়টি আবার তাদের বিষয়। কাজেই এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপে যেতে হবে।
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ভারতে বসে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আগুনে ঘি ঢালছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অন্য দেশের ইন্টারফেয়ার করা যৌক্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেশে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোর কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে সরকারের কাছেও যথেষ্ট তথ্য নেই। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সাত মাসের বেশি পার করে ফেলেছে। 
সাবেক কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেনের নেতৃত্বে কূটনীতিক অঙ্গনে সাফল্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মহল সমালোচনা করছে। তার জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, যদি কাউকে পাওয়া যায় এরচেয়ে ভালো পারবে, আমি খুব আনন্দের সঙ্গে তাকে এখানে স্বাগত জানিয়ে চলে যাব।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার মন্তব্য এটুকু নিশ্চই আমি পারছি না। না হলে এ প্রশ্ন আসছে কেন? আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে, যদি কাউকে পাওয়া যায় এরচেয়ে ভালো পারবে আমি খুব আনন্দের সঙ্গে তাকে এখানে স্বাগত জানিয়ে চলে যাব।

×