
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন
ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টার্গেট করে জোরেশোরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সোমবার রাজধানীর ইটিআই ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও বিদায়ী কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরে ভোট করতে হলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম আগামী জুন মাসে শেষ হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে আমাদের প্রায় দুই মাস হাতে সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। আগামী জুনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব; স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের এমন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সিইসি বলেন, সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে জুনে সম্ভব।
সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লাখ মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া না হয় এবং নতুন ৩৫ লাখ ভোটারকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়। সিইসি মনে করেন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেছেন। তারা বিজ্ঞ এবং জ্ঞানী লোকজন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এ বিষয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশন তাতে জড়িত হতে চায় না। আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হোক।
সিইসি বলেন, আগেভাগে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। ভোটার তালিকা তৈরি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে। সীমানা নির্ধারণের অনেক আবেদন ঝুলে আছে। আইনি জটিলতার কারণে তারা নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। এই আইন সংশোধন করার জন্য তারা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। আরও কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে নির্বাচন কমিশন। যদি সংস্কার কমিশন গঠন করা না হতো তাহলেও এটি করতে হতো।
সিইসি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার বলে কমিশন মনে করে সেটুকু করার উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব কিনা এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, তারা মনে করছেন ডিসেম্বর আসতে আসতে এই পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে তারা এমন একটি জোয়ার সৃষ্টি করবেন যেখানে ভোট ছাড়া মানুষের আর কোনো চিন্তা থাকবে না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অন্তর্বর্তী সরকার তো এ বছর ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছেন, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চিন্তা কি? এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, জুনে তো করা যাবে না। করলে হয়ত এপ্রিলে করতে হবে। তবে আমরা মিনিমাম সময় ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার ঐকমত্য কমিশন করেছে, যার মেয়াদ ছয় মাস। তাহলে মিনিমাম সংস্কার যদি হয়, তবে ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে ভোটার তালিকা যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, তাহলে তো আগের মতোই কবর থেকে এসে ১৬ লাখ মানুষ ভোট দিয়ে যাবে।
সিইসি বলেন, ভোটার তালিকার পাশাপাশি আমরা অন্যান্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনে অনেক আবেদন এসেছে। আমরা এরই মধ্যে সরকারকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন হোক, আর সীমানা নির্ধারণ হোক, সেটা আমরা করার চেষ্টা করছি।
সিইসি বলেন, আগে পত্রপত্রিকায় ভালো ছাড়া খারাপ খবর আসত না। এখনো তো প্রকৃত খবর আসে। সোশ্যাল মিডিয়ার আচরণবিধির বিষয়ে তথ্য আসছে। এরইমধ্যে অনেকে প্রচার শুরু করেছেন। তফসিলের আগে থেকেই কিন্তু হবে। চরিত্র হননও কিন্তু চলতে থাকবে। এটি যাতে না হয়, কীভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, গণমাধ্যম এতে ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সাহায্য চাই। একটা গুজব রটিয়ে দিল ভোট সেন্টারে যে, দুষ্টুমিকে মারামারি বা একজন আরেকজনের কলার ধরল, এটা মারা গেছে বলে চালিয়ে দিল। এ জন্য আমরা গণমাধ্যমের পরামর্শ ও সহায়তা চাই।
সিইসি বলেন, ঐকমত্য কমিশন নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে এটি আমরা মনে করি না। একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন সবাই চায়। এই একটি পয়েন্টে পুরো জাতিই এক। সব দলের নিজস্ব দৃষ্টি আছে। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণতন্ত্র মানে হলো ভিন্নমত, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন চাহিদা থাকবে। যাই হোক আমাদের প্রস্তুতি থেমে থাকবে না। আগে একেক কমিশনার একেক রকম লিখতেন।
আমাদের সবার চিন্তা, মানসিকতা এক। আমাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই। অন্যের এজেন্ডাও নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাব। সবাইকে নিজের জমির মতো ভোটও পাহারা দিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, অনেক বাংলাদেশী নাগরিক স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা হয়েছেন। নানা ধরনের রিলিফের (ত্রাণ) আশায় ইচ্ছাকৃতভাবে তারা রোহিঙ্গা হচ্ছেন। কাজেই এটি এক জটিল পরিস্থিতি। কক্সবাজার এলাকায় বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছি, তারা যেন ভোটার হতে না পারে। তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশীদের বিয়ে হচ্ছে। অনেক সময় স্বামী রোহিঙ্গা, স্ত্রী বাংলাদেশী। আবার স্ত্রী বাংলাদেশী, স্বামী রোহিঙ্গা। এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি।
সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোতে সঠিক ভোট হয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, যদি সাংবাদিকদের মতো নির্বাচন করতে পারতাম, ভালো হতো। সাংবাদিকদের সংগঠনের ভোটে কোনো ঝামেলা নেই, কারচুপি নেই, অভিযোগও নেই। আমরা অবাধ তথ্যপ্রবাহ চাই।
রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-(আরএফইডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ও ইটিআই মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান প্রমুখ।