ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, আর্মি, নেভি, বিজিবির সমন্বয়ে টহল

কম্বাইন্ড প্যাট্রোলিং শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কম্বাইন্ড প্যাট্রোলিং শুরু

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোর কমিটির সভায় বক্তব্য রাখেন

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার কঠোর অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে কম¦াইন্ড প্যাট্রোলিংয়ে (সমন্বিত টহল) নামানো হয়েছে যৌথবাহিনীকে। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যৌথবাহিনীর চলমান অপারেশন আরও জোরদার করা হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ব্রিফিংয়ে বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম টের পাওয়া যাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক দাবি করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো, সেটা কখনো কোনো মিডিয়া বলেনি। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে অপারেশন আরও জোরদার করা হবে।
ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ অন্য বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল দেবে। যৌথভাবে টহল দেওয়া হবে। পুলিশ, আর্মি, অনেক ক্ষেত্রে নেভি, বিজিবি, এরা সবাই একসঙ্গে কম্বাইন্ড প্যাট্রোলিং করবেন। একইসঙ্গে বৈঠকে গোয়েন্দা তথ্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আমরা অ্যাকশনে যাব। 
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বলব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে এটার উন্নতি করার অবকাশ রয়েছে। ছোটখাটো ঘটনা সবসময় ঘটেছে, দুই-একদিন আগেও ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে এজন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়Ñ এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই না এ ধরনের একটি ঘটনাও ঘটুক।’
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। এ মিটিংয়ে অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে আমাদের কোনো সাংবাদিক লেখেননি আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমি নিজেও একসময় সাংবাদিকতা করেছি। আমি একসময় মর্নিং নিউজে ছিলাম। আমরাও কোনোদিন লিখিনি।
রবিবার রাজধানীর বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলামকে গুলি করার ঘটনাকে ছোটখাটো ঘটনা উল্লেখ করে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বনশ্রীর ঘটনা আগে ঘটলে সেটা সবার জানতে দুইদিন সময় লাগত। কিন্তু এখন সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা জানা যাচ্ছে। এজন্যই আমরা ভাবছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়তো বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে আছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কী নির্দেশনা দিয়েছেন- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাতেই আপনারা দেখবেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম অনেক বেড়ে গেছে।’ 
মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে, মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত করতে চান- এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে আশ্বস্ত করার জন্যই তো আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং করলাম। তাদের একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছি, তারা যেন সন্ধ্যার পর থেকেই কাজ শুরু করে। আপনারা এটি সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন।
উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবির প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পদত্যাগ তো পদত্যাগ। অনেকে তো আমার জানাজাও পড়ে ফেলেছে।’
ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব যা বলেন ॥ বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ঢাকাসহ যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা টহল (প্যাট্রোলিং) বাড়াব। যতটা সম্ভব টহল বাড়াব এবং এই টহল আজ (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে দেখবেন পুরো ঢাকা শহরে।

এটি যৌথভাবে টহল দেওয়া হবে। পুলিশ, আর্মি, অনেক ক্ষেত্রে নেভি, বিজিবি, এরা সবাই একসঙ্গে কম্বাইন্ড প্যাট্রোলিং করবেন। অনেক জায়গায় চেকপোস্ট বসবে। জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আজকের সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে গোয়েন্দা তথ্য বাড়ানোর। আমাদের যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছেন, তারা তাদের মতো করে আরও তথ্য সংগ্রহ করবেন। সেই অনুযায়ী আমরা অ্যাকশনে যাব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ঢাকা খুব যানজটপ্রবণ নগরী। সেজন্য কোনো স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, সেই জায়গায় যেতে যেতে দেরি হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রচুর মোটরসাইকেল দেওয়া হবে। খুব দ্রুত মোটরসাইকেলগুলো কেনা হবে। যাতে দুইজন করে খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারেন।

এটা পুলিশের ক্ষেত্রে অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেওয়া হবে।’ শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আমরা আজকে সন্ধ্যা থেকে টহল শুরু করি, তারপর আপনারা দেখবেন পরিস্থিতি। সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে বলেই আজকে মিটিং হয়েছে। আমরা চাই, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব উন্নত করা। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। আমরা এই কাজটি সুচারুরূপে করতে চাই।’
কক্সবাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটনা এখনো একটু ফ্লুইড সিচুয়েশন। আমরা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে রিপোর্ট চাচ্ছি। এটা আমাদের দিলে তারপর আপনারা জানবেন।’
হঠাৎ করে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা আশা করি, দৃশ্যমান প্রভাব আপনারা দ্রুত দেখবেন।’
দেশজুড়ে জোরদার টহল শুরু- পুলিশ প্রধান ॥ এদিকে, সোমবার রাজশাহী পিটিআইয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ অন্য বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী টহল শুরু করেছে। র‌্যাব, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে টহল করবে। 
রাজধানীর বনশ্রীর রামপুরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাহারুল আলম বলেন, শুধু রবিবার রাতে নয়, আগের রাতেও বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা শনিবার সকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। র‌্যাব, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও ডিএমপি যৌথভাবে প্যাট্রোল প্রোগ্রাম করবে। এভাবে দেখি উন্নতি হয় কি না, নইলে আমাদের অন্য স্টেপ নিতে হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রশ্নে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, একটা গোষ্ঠী চাচ্ছে না যে আমরা স্থিতিশীল হই। তারা চেষ্টা করছে। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

×