
ছবি:সংগৃহীত
বুয়েটে শিক্ষার্থী নির্যাতন, ১০ বছর পর মামলা
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির জেরে হামলার শিকার হন বুয়েটের শিক্ষার্থীর তানজিলুর রহমান। সে ঘটনায় ১০ বছর পর মামলা দায়ের করেছেন তানজিলের পিতা মো. আলমগীর সিকদার।
যেখানে বুয়েটের সাবেক ছাত্রকল্যাণ পরিচালকসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করা।
গত (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
তানজিলুর অভিযোগ করে বলেন, হামলার মাস খানেক আগে বুয়েট ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীরা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখির কারণে হুমকি দেয়। এই হুমকির পরে তৎকালীন বস্তু ও ধাতব কৌশলের বিভাগীয় প্রধানের পরামর্শে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মো. দেলোয়ার হোসেনের নিকট নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন দিলেও তিনি তখন কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেন নি। হামলা ও নির্যাতনের আগের দিন আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় র্যাগিং এর সময় জোর করে সালাম দেওয়ার বিরুদ্ধে লিখলে হামলাকারীরা তার উপরে আবারও ক্ষুব্ধ হয়। হামলার সময়ও দায়িত্বরত ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন কোনো রকম পদক্ষেপ নেন নি, বরং পরবর্তীতে উপাচার্যের কক্ষে এসে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার জন্য তাকে তিরস্কার করে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বুয়েটের বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের ফাউন্ড্রি ল্যাবে অ্যাকাডেমিক অ্যাসাইনমেন্ট কাজে গিয়েছিলাম। ল্যাবের গেটে আবু সাঈদ কনক (মেকানিকাল ১০, ঠিকানা- পাবনা, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক), প্রতীক দত্ত (ইইই ১১, হোল্ড অন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভাইরাল, বর্তমানে গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া এসি ল্যান্ড), আবু আনাস শুভম (মেকানিকাল ০৯), সিয়াম হোসেন (মেকানিকাল ০৯), ফাইরুজ চৌধুরী (সিভিল ০৬, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডিরত, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মিম মানতাসার স্বামী) ও শুভ্রজ্যোতি টিকাদার (মেকানিকাল ০৯, মৃত) আরও ৮-১০ জন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে আমার উপরে হামলা চালায়। হামলা থেকে বাঁচতে আমি ল্যাব সংলগ্ন গার্ড রুমে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিই এবং হট্টগোল করে লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করি।
আমার চিৎকার শুনে বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগের প্রায় সব শিক্ষক ও কর্মচারী উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পরে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (প্রক্টর) ড. মো. দেলোয়ার হোসেন সেখানে উপস্থিত হলেও আমাকে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যান। এর পরেই উপরে উল্লিখিত বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে সিয়াম হোসেন, আবু আনাস শুভম ও ফাইরুজ চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে গার্ড রুমের দরজা জানালার কাচ ভেঙ্গে আমাকে বের করে এবং আবু সাঈদ কনক, প্রতীক দত্ত ও শুভ্রজ্যোতি টিকাদার সবাইকে সাথে নিয়ে লাঠি ও রড দিয়ে আমাকে নির্মম ও পৈশাচিকভাবে পেটাতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে বুয়েটের তৎকালীন রেজিস্ট্রার (বর্তমান ছাত্রকল্যাণ পরিচালক) ড. একেএম মাসুদ উপস্থিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে তৎকালীন উপাচার্য খালেদা একরামের অফিসে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগীর পিতা জানান, আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয়ে কারণে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় থানায় মামলা দায়ের করার মতো কোন সুযোগ ছিল না।তাই এজহার করতে দেরি হলো।
তিনি আরও জানান, তার পুত্র তানজিলুর রহমান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকায় তার পক্ষে পিতা হিসেবে তিনি এজহার দায়ের করেন। এবং আসামিদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
আঁখি