ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশে নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে : সেনাপ্রধান

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে : সেনাপ্রধান

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কোনো পররাষ্ট্রনীতিই কাজে আসবে না। শক্তিশালী প্রতিরক্ষা না থাকলে আপনি যে বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না তা ইতিহাস ঘাটলেই দেখতে পারবেন।

রোববার ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সেনাপ্রধান বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, তখন আমাদের অবশ্যই ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই উন্নয়নের চাহিদাকে বোঝার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এজন্যই এফএসডিএস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এফএসডিএস কৌশলগত গবেষণা, নীতিগত সুপারিশ এবং উন্মুক্ত সংলাপের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। যা আমাদের জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতে অবদান রাখবে। আমরা বিশ্বাস করি যে একটি শক্তিশালী গবেষণা ভিত্তি সুশাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জাতীয় স্থিতিস্থাপকতার জন্য নীতিগত কাঠামো অপরিহার্য। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এফএসডিএসকে সফল করতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

এফএসডিএস’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, সময়োপযোগী গবেষণা পরিচালনা, গঠনমূলক আলোচনার আয়োজন এবং বাংলাদেশের সর্বোত্তম স্বার্থে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করবে বলে আমি আশা করি। সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করবে এবং সরকার এটিকে গুরুত্ব দেবে বলেও প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক গবেষণা সংস্থা রয়েছে, যারা ভালো কাজ করছে। কিন্তু সরকারের নীতি নির্ধারণে এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আপনি যত ভালো গবেষণা করুন না কেন সরকার বা অন্যরা এগুলো কার্যকর না করলে, এসব গবেষণার কোনো মূল্য থাকবে না।

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত করা যেতে পারে মন্তব্য করে সেনাপ্রধান আরও বলেন, যদি তারা অংশ নেয়, যদি তারা আমাদের সঙ্গে থাকে, তাহলে এটি তাদের জন্যও ভালো হবে।

অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি ইতিহাসের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন বিশ্বে অনেক মহান নেতা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের কৌশলগত দক্ষতা ছিল না।

দেশের প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষাকে উন্নত করতে হবে এবং সবদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের যোগাযোগের জন্য একটি অত্যন্ত নিরাপদ সমুদ্রপথ প্রয়োজন। তার মানে আমাদের উন্নয়ন করতে হবে। এটা কি আমাদের আছে? আমার মনে হয় না আমাদের যোগাযোগের একটি নিরাপদ সমুদ্রপথ আছে। এটি না থাকলে আমরা বিপদে পড়ব। আমদানি হবে না, রপ্তানি হবে না। তাই এই ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে হবে। আমাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা না থাকলে আপনি আপনার বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ইতিহাস ঘাটলেই আপনি এটি দেখতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে যেন আমরা উন্নতি করতে পারি এজন্য আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবার এগিয়ে আসা উচিত, সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত যাতে আমরা সামগ্রিক ও জাতি হিসেবে উন্নতি করতে পারি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে চায়না, অন্যদিকে ভারত। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। তাই বাংলাদেশকে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

জাতীয় সংহতি এবং অগ্রগতির জন্য সব অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের(এফএসডিএস)। বেশ কয়েকটি থিঙ্কট্যাঙ্ক রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। এর মূল উদ্দেশ্য হলো 'বাংলাদেশ প্রথম' এই শক্তিশালী মন্ত্র, যা জাতীয় নীতি এবং সংহতি জাগিয়ে তোলে। জাতীয় নিরাপত্তা, বেসামরিক-সামরিক সহযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত বিষয় অগ্রাধিকার পাবে।

অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান, ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, মেজর জেনারেল (অব.) আবুল কালাম মো. হুমায়ুন কবির, লে. জে (অব.) এমরান উদ্দিন খান বক্তব্য রাখেন।

 

মো. মহিউদ্দিন

×