
.
বৃষ্টিতে ভিজেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা-বলয়। কচি চা গাছের রুক্ষতা দূর করে বৃষ্টিতে ফিরেছে সতেজতা। এতে উৎপাদনে নতুন বছরে সুফল বয়ে আনবে।
রংপুর বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে প্রথম দফায় বৃষ্টি শুরু হয়ে চার মিনিট স্থায়ী হয়। দ্বিতীয় দফায় ৯টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ১১টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে।
এদিকে সমতলের চা বাগানের হিসাব অনুযায়ী, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরে একবার করে চা-গাছে প্রুনিং করা হয়। একে বলে ছাঁটাই করা। ডিসেম্বরের পর থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলা নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুরে। এজন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাগান থেকে কাঁচা চা-পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিগুলোর উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে উত্তরাঞ্চলের সমতলের এই ৫ জেলায় ১০ হাজার একর জমিতে চা উৎপাদন শুরু হয়ে আজ উত্তরাঞ্চলের সমতলে চা বাগান মাথা উঁঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলের সমতলের সেকশনে (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) প্রুনিং হয়ে থাকে। তখন চা বাগানগুলোর অন্য এক রূপ ধরা পড়ে। সবুজ সতেজ পাতাগুলো বিলীন হয়ে তখন শুধু মরা ডালের উপস্থিতি দেখা যায়। সময় গড়ায়। চা-বাগান থেকে ধীরে ধীরে শীত বিদায় নেয়। চলে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। তবে শীতের আমেজ পুরোপুরি উধাও হয়ে যায় না। সকালে এবং সন্ধ্যার আঁধারে নামে শীতের উপস্থিতি। এর মাঝেই প্রুনিং করা চা-গাছেরা যেন বৃষ্টির প্রহর গুনতে থাকে।
অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার এবং চা বাগানের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, বাগানের চা গাছগুলোতে প্রুনিং শেষে নতুন কুঁড়ি গজায়। প্রুনিংয়ের পর চা বাগানগুলোতে চা গাছের গোড়া সাফ করানো, চা গাছের মাঝে বেড়ে ওঠা লতাগুলোকে উপড়ে ফেলে দেওয়া প্রভৃতি কাজ চলে। পরবর্তীতে চা গাছে আসে নতুন পাতা। চা গাছে প্রুনিং করার পর গাছের গোড়ার মধ্যে উলু পোকার (উঁইপোকা) বাসা থাকে। চা গাছের জন্য উলু পোকা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই উলু চা গাছের গোড়া বা শরীরের অংশ খেয়ে ফেলে। তখন চা গাছগুলো মরে যায়। তাই প্রুনিং-এর পর সমতল জায়গায় তা পরিষ্কার করা হয়। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে আগাছা পরিষ্কারের পাশাপাশি চা গাছে কিছু পরগাছা উদ্ভিদ জন্ম নিয়েছিল। তখন ওগুলোকে আমরা পরিষ্কার করি। তারপর শুষ্ক মৌসুমে যাতে করে আগুন না লাগে তার জন্য আমরা পরিষ্কার করে রাখি। এগুলো আমরা করি সব ম্যাচিউরড টি-তে (প্রাপ্তবয়স্ক চা গাছে)। চা চাষি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ইয়াং-টিতে
(বাচ্চা চারা) এই সময় মাটি আচ্ছাদন করে কচুরিপানা দিয়ে মাটি ঢেকে দেওয়া হয় যাতে করে মাটির পানি বা®প না হয়ে যায়। এটাকে চায়ের ভাষায় বলে মার্চিং। এ ছাড়া চা বাগানের ক্লোন নার্সারিতে চলে মাটি দিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ ভরার কাজ। এতদিন বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে চা গাছে পানি দিতে হয়েছে।
সূত্রমতে চা বলয়ের প্রুনিং শেষে বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অনেক উপকারী। উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছরের শুরুতেই বাগানগুলোতে চা গাছের ডাল ছাঁটাই করা হয়। এতে উৎপাদন ও গুণগতমান ভালো হয়। এবার প্রুনিংয়ের পর মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে চা গাছগুলোতে নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি মাথায় মেখে সমৃদ্ধির সূচনা শুরু করে দিয়েছে চা-গাছেরা।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষত ইয়াং টি বা নতুন চা গাছ, যেগুলোর জন্য বেশি প্রয়োজন। বৃষ্টির ফলে প্রুনিং করা চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির জন্য সঠিক সময়ে চা গাছের কুঁড়ি চলে আসবে। তাড়াতাড়ি চা পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যাওয়া সম্ভব হবে।
আগামী পহেলা মার্চ থেকে শুরু হবে সমতল চা বাগানের নতুন পাতা। প্রুনিং-এ চা চাষিরা প্রথম ফ্লাশে এজন্য বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিল। শীতের বিদায় বেলায় এবং বসন্ত আসার পর পরই চা গাছে বৃষ্টির প্রয়োজন পড়ে। প্রথমে বৃষ্টি, তার কিছুদিন পর থেকে উষ্ণ হাওয়া চা পাতাকে ডাঁটো করে তোলে। চা পাতার বৃদ্ধি থেকে ভেতরে রস সঞ্চারণ দুইয়ের জন্যই বৃষ্টি চাই। তাতেই প্রথম ফ্লাশের চা পাতার স্বাদ, গন্ধ নির্ভর করে। কিন্তু দেখা মিলছিল না বৃষ্টির। অবশেষে সেই বৃষ্টি ঝরেছে। চা-চাষি শাহিন ও নুরুজ্জামান নূর জানান, বৃষ্টির কারণে চা বাগানগুলো উন্নতমানের পাতার জন্য তৈরি হবে। বৃষ্টিতে সমতলের চা মহল্লায় খুশির হাওয়া বইছে।