
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান পোশাক আমদানিকারী দেশগুলো পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করতে টেকসই জ্বালানির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে চলেছে। এর ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে, এমন মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার রাজধানীতে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা দ্রুত জ্বালানি রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার দিকটি বিশেষভাবে তুলে ধরেন। সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ-এর ‘ইনস্পায়ার: ইনিশিয়েটিভ টু স্টিমুলেট প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ফর রিসোর্স এফিশিয়েন্সি’প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিট বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তৈরি পোশাক খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে ইউরোপের কঠোর পরিবেশগত নীতিমালা মেনে চলতে হলে এ খাতকে অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করতে হবে। এই পরিবর্তন করা না গেলে, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো টেকসই বিনিয়োগের মাধ্যমে এই খাতকে শক্তিশালী করা, যাতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পরিচয়টি বিশ্বব্যাপী একটি টেকসই ও মানসম্মত পণ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।”
সিডার ট্রেড, প্রাইভেট সেক্টর ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টস বিভাগের প্রধান কিয়েল ফোর্সবার্গ বলেন, “শুধু সরকারি তহবিল দিয়ে পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব রূপান্তর আনা সম্ভব নয়। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ আনতে হলে বেসরকারি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং ঝুঁকি কমাতে হবে।”
সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেন, “সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হলো ‘সঞ্চয় করা’ জ্বালানি। পোশাক কারখানাগুলো যদি তাদের জ্বালানি খরচ ১০-২০% কমাতে পারে, তাহলে এটি ব্যয় সাশ্রয় ও পরিবেশের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।”
তিনি আরও জানান, “ইনস্পায়ার প্রকল্প শুধু নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটাবে না, বরং নারী কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে যেসব কারখানা সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ করবে, তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা থাকবে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত দেশের জিডিপির ১০.৩৫% অবদান রেখেছে এবং ৪৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১০.২৭% বেশি। তবে, এই খাত এখনও উচ্চমাত্রার জ্বালানি খরচের পাশাপাশি বাংলাদেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৫.৪%-এর জন্য দায়ী।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে সবুজায়ন: প্রতিশ্রুতি থেকে তৎপরতা শীর্ষক আলোচনাপর্বে অংশ নেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মো. আখতার হোসেন অপূর্ব, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সাপোর্ট কমিটির সদস্য মো. রেজওয়ান সেলিম, জায়েতুন বিজনেস সলিউশন চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী, সোলশেয়ারের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনোভেশন ডিরেক্টর ইশতিয়াক আহমেদ, কাপ্পাহলের সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার রাফিয়া সুলতানা, সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ-এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সৈয়দা ইশরাত ফাতেমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইনস্পায়ার প্রকল্পটি মূলত রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোকে জ্বালানি রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। প্রকল্পের আওতায় কারখানাগুলোকে মোট বিনিয়োগের ৬০-৭০% বহন করতে হবে এবং জুলাই ২০২৫ নাগাদ এ জন্য প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার (পোর্টফোলিও ডেভেলপমেন্ট) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ।
স্বপ্না/ রাজু