ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে ৬০ লাখ করে

এ মাসের মধ্যেই প্রায় সব শিক্ষার্থী বই পাবে

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ মাসের মধ্যেই প্রায় সব  শিক্ষার্থী বই পাবে

.

বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্য বই দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষায় সংকট তৈরি হয়েছে। তবে চলতি মাসেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যাবে নতুন বই। এতে শিখন পাঠদানে গতি ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সময়ে ক্লাসরুমে পাঠ্য বইয়ের সংকট তীব্র। কিন্তু এখন প্রতিদিন অন্তত ৬০-৭০ লাখ বই ছাপা হচ্ছে। এতে চলতি মাসে সব শিক্ষার্থীর হাতে ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ্য বই পৌঁছে যাবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পাঠ্যপুস্তক সদস্য অধ্যাপক . রিয়াদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, বোর্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি মাসেই শতভাগ বই পৌঁছে দেওয়া হবে। আমরা এমন পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মাধ্যমিক প্রাথমিক মিলে ৮০ শতাংশের বেশি বই ছাপা হয়েছে। সংখ্যায় সেটি ৩১ কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার। এর মধ্যে প্রাথমিকে কোটি ৬২ লাখ পাঠ্য বই। আর মাধ্যমিকে ২২ কোটি ৮০ লাখের বেশি। তবে ছাড়পত্র হয়েছে ২৭ কোটির মতো। যাকে পিডিআই বা (প্রি ডেলিভারি ইন্সপেকশন) বলা হয়।

এর পরও মাঠ পর্যায়ে এখনো বইয়ের জন্য হাহাকার রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী অভিভাবকের অভিযোগ, এখনো কালোবাজারি থেকে বই কিনতে হচ্ছে। অনেক স্কুলে এখনো বই দেওয়াই হয়নি। এর জন্য অবশ্য এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, বই ছাপা হলেও সেটি পিডিআই রিপোর্ট সমগ্র দেশে পাঠাতে একটু সময় লাগে। সব জায়গায় সব পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছেÑ এমনটা বলা যাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, আগামী এক সপ্তাহ পর এমন অভিযোগ আর তেমন থাকবে না।

এর কারণ প্রসঙ্গে জানা যায়, পাঠ্যবই ছাপা হওয়ার পর প্রেস মালিকরা আর বই নিজের কাছে রাখতে চান না। জায়গার সংকট বিপুল বইয়ের কারণে পাঠ্য বইকে বোঝা মনে করে। যে কারণে যতদ্রুত সম্ভব তারা পাঠ্য বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। ছাড়াও কাজের বিল তোলার একটি বড় কারণ তো রয়েছেই।

বই বিপণন ছাপার বিষয়ে একাধিক প্রেস মালিকের সঙ্গে জনকণ্ঠের কথা হয়। এর মধ্যে ছিলেন মোল্লা প্রেসের স্বত্বাধিকারী মিন্টু মোল্লা। বছর তিনি কোটি ৬৫ লাখ বইয়ের কাজ পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার বই ছাপা হয়েছে কোটি ৪০ লাখ। তিনি আশা করছেন এক সপ্তাহের মধ্যেই বাকি বইয়ের কাজ শেষ হবে। মিন্টু মোল্লা জানান, এবার এনসিটিবির নির্দেশনা অনুযায়ী বই ছাপাতে হয়েছে। যে কারণে বই ছাপতে কিছুটা বিড়ম্বনা সময় বেশি লেগেছে। বিষয়ে তিনি জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী এবার নবম দশম শ্রেণির বই আগে ছাপতে হয়েছে। এরপর ছাপতে হয়েছে বাংলা, ইংরেজি গণিত বিষয়ের। ধীরে ধীরে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা গেছে।

বছর শেষ মুুহূর্তে দরপত্র বাতিল, ছাপাখানার সক্ষমতার অভাব, কাগজের সংকটে পাঠ্য বই ছাপার কাজ চলেছে ধীরগতিতে। শেষ মুহূর্তে বইয়ের কন্টেন্ট পরিবর্তনও ছিল বড় কারণ। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্য বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা কোটি ৩৪ লাখ হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের কোটি লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। তা ছাড়া  দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হবে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কে এম রিয়াজুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, প্রেস মালিকরা যদি সহযোগিতা করে তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বই দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা সহযোগিতা না করলে এটি এপ্রিলেও সম্ভব না। তিনি বলেন, এবার প্রতিটন কাগজের দর লাখ ৪২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে আরও ২০ ভাগ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হচ্ছে। এতে যদি তারা লাখ ৪০ হাজার টাকায় কাগজ কেনে, তাতেও তারা লাভ করবে।

যদিও এর আগে পাঠ্যবই ছাপার কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে বলে জানিয়ে ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে অপারগতা জানিয়েছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা . ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেব না। পাঠ্য বই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। বই ছাপার প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে কিছু কথা বলব। আমি মনে করি, পাঠ্য বই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে।

আগামী বছর জানুয়ারিতে বই দিতে প্রস্তুতি পাঠ্য বই নিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে এবার আগেভাগেই কাজ শুরু করবে এনসিটিবি। জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। তবে বইয়ের দরপত্র শুরুর আগে প্রেসগুলোর সক্ষমতা যাচাই করবে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্য বই ছাপানোর কাগুজে যে সক্ষমতা প্রেসগুলোর আছে, বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। অনেক ব্যবসায়ী বেশি কাজ বাগিয়ে নিতেই অতিরঞ্জিত সক্ষমতা দেখান। যে কারণে পরিকল্পনা করেও নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া যায় না।

এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক সদস্য অধ্যাপক . রিয়াদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এবার প্রেস মালিকদের ক্যাপাসিটি অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। তারা তাদের সক্ষমতার বিবরণ এনসিটিবিকে দেওয়ার পর এটি করা হবে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, প্রেস মালিকরা দাবি করছেন, তার চারটি মেশিন আছে। কিন্তু কয়টি ফাংশন করছে সেটি আমরা জানছি না। আবার তার ছাপার সক্ষমতা থাকলেও বাঁধাইয়ের সক্ষমতা আছে কী না, সেটিও দেখা হবে। তিনি জানান, এবারও প্রেস মালিকদের বই বাঁধাইয়ের জন্য শ্রমিক দিতে হয়েছে। এসব বিড়ম্বনা আগামীতে আর পোহাবে না বোর্ড। ভবিষ্যতে প্রেসের সক্ষমতা অনুযায়ীই দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পাবেন ব্যবসায়ীরা।

×