
.
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার যেটা আছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। তিনি বলেন, দেশে আবার যদি ফ্যাসিজমের উত্থান হয়, একুশের চেতনাই তা রুখবে।
রিজভী বলেন, আগে স্থানীয় সরকার, না জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেই বিতর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ গ্রহণ করা উচিত নয়। বরং এই সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ যাদের নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেবে, তারাই নির্ধারণ করবে কোন্ নির্বাচন কখন হবে।
রিজভী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী জিতেছে, সিলেট সিটি করপোরশেন নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান জিতেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোহাম্মদ হানিফ জিতেছে। বিএনপি সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করায় বিরোধী দলের প্রার্থীরা জিতেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তেমনটা হয়নি।
রিজভী বলেন, আমাদের কিছু কিছু নেতা বা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের দল বিএনপির অবস্থান নয়। এই কথাটা আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম।
রিজভী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা অম্লান চেতনা, এই চেতনা কোনোদিন ম্লান হবে না। যদি আবারও কোনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় আমাদের দামাল ছেলেরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আবারও রাজপথে লড়াইয়ে নামতে উদ্ধুদ্ধ হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা মনে করি যে, ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে এমন একটি চেতনা, এমন একটি বৈপ্লবিক আদর্শ যা আমাদের উদ্ধুদ্ধ করে, যেটাকে কখনোই ধবংস করা যায় না, যেটাকে কখনোই ম্লান করা যায় না। যুগ যুগ ধরে, অনাধিকাল ধরে যতদিন পৃথিবীর মানুষ এবং আমাদের সমাজ-সংসার থাকবে, ততদিন একুশ আমাদের সাহস জোগাবে এবং লড়াই করতে উদ্ধুব্ধ করবে।
রিজভী বলেন, একুশ জাতীয় স্বাধীনতার প্রথম সোপান। এই ভাষা আন্দোলনের সোপান পেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে। আমরা আমাদের মহার্জন স্বাধীনতা লাভ করেছি। যখনই আমরা স্বৈরাচারের কবলের মধ্যে পড়েছি, যখন দেশে গণতন্ত্রহারা মানুষ বন্দিশালার মধ্যে বাস করেছে তখন ’৫২ আমাদের উদ্ধুব্ধ করেছে, আমাদের প্রেরণা জাগরিত করেছে, কিভাবে আমরা এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, অত্যাচারি শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করব।
রিজভী বলেন, একুশের প্রেরণায় আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়ায় আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনকালে ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব তার মধ্য দিয়ে সেই ভয়ংকর উৎপীড়ক ও রক্তপিপাসু স্বৈরাচার, ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, দেশের তরুণ প্রজন্ম আজকে যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের একুশ বছর বয়স তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোট কি তারা জানে না, তারা যেন এবার ভোট দিতে পারে। কারণ, দেশের মানুষ ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে, ভোট ধ্বংস করেছে। এগুলো থেকে উত্তরণে ঘটিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্যই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সরকারের দায়িত্ব।
ভোর ৬ টায় নিউ মার্কেটের কাছে বলাকা সিনেমা হলের সামনে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সাড়ে ৬ টায় সেখান থেকে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী প্রভাতফেরি করে আজীমপুর কবরস্থানে যায়। সেখানে ভাষা শহীদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে ফাতেহা পাঠ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন প্রভাতফেরি করে। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে শহীদ মিনারের বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় সেখানে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাসিরুদ্দিন অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, আমিনুল হক, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
১৭ বছর ভোটাধিকার হরণ করে একুশের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে -কাদের গনি ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৭ বছর ভোটাধিকার হরণ করে একুশের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। এখন দরকার জনগণকে দেশের মালিকানা ফেরত দেওয়া। এজন্য সবার আগে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই কেবল সংস্কারের বৈধ অধিকার রাখেন।