
ছবি: সংগৃহীত।
ঢাকার কূটনৈতিক এলাকার বাতাসে বসন্তের গন্ধ, তবে ডিপ্লোমেটিক জোনের শীতলতা যেন কিছুটা অন্যরকম। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় ছায়া দীর্ঘ হতে থাকে, আর চীনা দূতাবাসের সাংবাদিকদের ভিড় থেকে সজাগ হয়ে ঢুকলেন রাষ্ট্রদূত ইয়াওয়েন। চোখে আত্মবিশ্বাস, টেবিলে রাখা নথি সরিয়ে তিনি বললেন, “বাংলাদেশের জন্য চীনের দরজা উন্মুক্ত। আমরা সরাসরি অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছি।”
এক মুহূর্তের নীরবতার পর ক্যামেরার শাটার ক্লিক। চীনের এই ঘোষণা যেন এক নতুন ভূরাজনীতি সূচিত করে। এতদিন যা শুধু গুঞ্জন ছিল, তা এবার প্রকাশ্যে এল। বাংলাদেশের ভূরাজনীতি কি এবার পাল্টাতে যাচ্ছে?
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ক্রমাগত সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সীমান্ত সংঘাত, কূটনৈতিক দূরত্ব, এবং বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপড়েন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা নতুন কৌশলগত অংশীদার খুঁজছেন এবং চীন সেই শূন্যস্থান পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে। রাষ্ট্রদূত ইয়াওয়েনের বক্তব্য স্পষ্ট—"চীনের অস্ত্র, উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন, সাশ্রয়ী এবং বিশ্বমানসম্পন্ন। আমরা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র অস্ত্র সরবরাহ নয়, বরং একটি বৃহত্তর ভূকৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এমন যে, এখানে মিত্রতার সমীকরণ দ্রুত পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে ঢাকা এবং দিল্লির সম্পর্ক চরম টানাপড়েনে পৌঁছেছে। সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ভারসাম্যের অভাব এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
এদিকে চীনের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা, এমনকি এটি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রসার নয়, বরং বাংলাদেশে নিরাপত্তা কাঠামোয় চীনের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান সুসংহত করার কৌশল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের প্রধান অংশীদার ছিল, তবে চীনের এই পদক্ষেপ দিল্লিকে তার নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে প্রবেশের মাধ্যমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে:
১. অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের রক্ষা নির্ভরতা তৈরি করা।
২. দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে চীনের কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করা।
৩. দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা এবং ভূকৌশলগত প্রতিযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা।
চীনের অস্ত্র সরবরাহ ভবিষ্যতের সামরিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যদি আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তাহলে চীন কি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় সরাসরি ভূমিকা রাখবে? অস্ত্র সরবরাহ কি সংকটকালীন সামরিক সহযোগিতার পূর্বাভাস?
রাত গভীর হচ্ছে ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায়, তবে চাইনিজ এম্বাসির ভেতরে এক গুরুত্বপূর্ণ চীনা কূটনৈতিক তখনো সজাগ। দূতাবাসের জানালার ওপাশে তিনি এক মনে নিজের ব্যস্ত রাস্তাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা তুলে নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়াল করলেন। ওপাশ থেকে ভারী গলায় কেউ বলল, "সব ঠিক আছে তো?"
জবাবে, সেই চীনা অফিসার একটু হাসলেন এবং জানালা দিয়ে ঢাকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কমরেড, খেলা তো মাত্র শুরু হয়েছে।”
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=72SJuH6cWi4&ab_channel=NTVNews
নুসরাত