ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ধনবাড়ীতে ৯২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই!

হাফিজুর রহমান.নিজস্ব সংবাদদাতা,মধুপুর,টাঙ্গাইল:

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ধনবাড়ীতে ৯২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই!

 


স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় ৯২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। শুক্রবার মহান শহীদ দিবস হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অর্থনৈতিক সংকট, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি বলে এলাকাবাসির অভিযোগ করেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ফেব্রয়ারি) বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহীদ মিনার নেই। এ উপজেলায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ একটি মহিলা ডিগ্রী কলেজ মিলে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১শ ৮০ টি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নল্যা মমতাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ (এআর) খান জানান, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও  প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়া এটা আমাদের জন্য দুঃখ জনক।

ধনবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭  ইউনিয়নে কলেজ ১৪ টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩ টি, দাখিল মাদ্রাসা ১২ টি, আলিম মাদ্রাসা ২ টি, ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসা ১ টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ টি এবং ২৬ টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।  মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে  ২৫ প্রতিষ্ঠানে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি ১১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। উপজেলায় ফাযিল ডিগ্রী ও দাখিল ১৫  টি মাদ্রাসা থাকলেও ১৪ টি মাদ্রাসায় আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা  ২৬ টি সহ কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ টি’র মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠানেও শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা সদরের পৌর এলাকায় একমাত্র আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজও কোন শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ধনবাড়ী পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে ৮৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হলেও ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তারা শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে ধরেন।

জানা গেছে, সরকারী নির্দেশনায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠছে না শহীদ মিনার। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও গড়ে উঠেনি শহীদ মিনার। শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি উৎফুল্লভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। শিক্ষার্থীদের অনেক দুর দুরন্তে থেকে কলা গাছ ও বাঁশ সংগ্রহ করে বা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়। দ্রত সময়ের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

বীরতারা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রায়হাতুল আক্তার রোভা, রাবেয়াতুল দিঘি, জুঁই আক্তার, তাইবা আক্তার, দিদারুল ইসলাম, রাহাদ ও বাজিতপুর আমির হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার, বাজিতপুর দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাইবা আক্তার, মারুফ হাসান সহ আরো অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রত শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী করেন তারা।

স্থানীয় এলাকাবাসি হাবিবুর রহমান ও লিখন হোসেন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্তরিকতার অভাব ছিলো  এবং প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। তবে ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার কারণে আমরা স্বাধীন মায়ের ভাষায় কথা বলা ও এই আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পেয়েছি। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না করার ফলে এই দিবসে যদি ছেলে মেয়েরা দিবসের তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

বীরতারা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার রেজাউল করিম জানান, সরকারীভাবে বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে জাতীয় দিবস পালন করা হয়।

বাজিতপুর আমির হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। শহীদ মিনার না থাকায় আমরা কলা গাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করে শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকি। সরকারী ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী করছি।

বাজিতপুর দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিনা খানম বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে আমরা মাতৃভাষা দিবস সহ বিভিন্ন দিবস পালন করে আসছি। তারপরেও শিক্ষার্থীরা এই জাতীয় দিবসের তাৎপর্যটা সঠিক ভাবে জানতে পারছে না। শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সর্ম্পকে জানতে পরবে। তাই সরকারের কাছে দাবী করছি যাতে দ্রত স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

ধনবাড়ী আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ: বারী বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্তেও অর্থ সংকটের কারণে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারী নির্দেশনা রয়েছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। অর্থনৈতিক সংকটসহ সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনার নির্মাণ হচ্ছে না। যে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তার  তালিকা করে  উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই স্থানীয় উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ দেয়া আছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল হাছান বলেন, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। তবে, অনেক সময় বিদ্যালয়ের উন্নয়কাজের মধ্য থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেয়া আছে। যত দ্রæত সম্ভব বাকী প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ “দৈনিক জনকণ্ঠ” কে জানান, সরকারী ভাবে আলাদা কোন বরাদ্দ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি। যে সব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

 

সাজিদ

×