
ছবি:সংগৃহীত
১৩ বা ১৪ মার্চ ২০২৫ সালে পৃথিবীকে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য উপহার দিতে যাচ্ছে একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, যা বিশ্বব্যাপী ‘ব্লাড মুন’ বা রক্তিম চাঁদ হিসেবে পরিচিত। এই মহাজাগতিক ঘটনা একটি সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, যা ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো ঘটবে এবং এর মধ্যে চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে পুরোপুরি ঢেকে গিয়ে রক্তিম বর্ণ ধারণ করবে। এই সময় চাঁদে লালচে আভা দেখা যাবে, যা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
ব্লাড মুন চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
ব্লাড মুন, বা রক্তিম চাঁদ, যখন দেখা যায় তখন চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে পুরোপুরি ঢুকে যায়। পৃথিবী যখন সূর্যের এবং চাঁদের মধ্যে অবস্থান করে, তখন সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত হয় এবং বায়ুমণ্ডল তার মধ্য দিয়ে সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে। এই বায়ুমণ্ডল সূর্যের আলোকে এমনভাবে ছেঁকে ফেলে যে কেবল লাল অথবা কমলা রঙের আলোই চাঁদের দিকে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়াটি Rayleigh Scattering নামে পরিচিত, এবং এটি সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়ের সময় আকাশকে লালচে রঙে রাঙানোর কারণও।
Rayleigh Scattering এর মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে লাল আভা প্রতিফলিত হয়ে চাঁদে এসে পৌঁছায়, যার কারণে চাঁদকে রক্তিম দেখায়। এই আভাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে ছেঁকে বের হয়ে আসে এবং চাঁদকে পুরোপুরি রক্তিম আভা দিয়ে ঢেকে দেয়, যা চাঁদের একটি বিশেষ দৃশ্য সৃষ্টি করে।
বিশ্বব্যাপী দৃশ্যমানতা:
১৩ বা ১৪ মার্চ ২০২৫-এ এই ব্লাড মুন চন্দ্রগ্রহণের দৃশ্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখা যাবে। বিশ্বব্যাপী এই দৃশ্য উপভোগ করা যাবে, বিশেষত উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং চিলি থেকে এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে দেখা যাবে। এই সময় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একরকমভাবে সারিবদ্ধ হয়ে পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে চাঁদ পুরোপুরি ঢুকে যাবে।
মহাজাগতিক ঘটনা:
এটি একটি বিরল এবং চমকপ্রদ মহাজাগতিক ঘটনা, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিপুল সংখ্যক মানুষকে আকর্ষণ করবে। বিশেষ করে আকাশপ্রেমী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই বিরল দৃশ্য উপভোগ করতে মুখিয়ে থাকবেন। এর আগে, এই ধরনের ব্লাড মুন চন্দ্রগ্রহণ ২০২২ সালের পর থেকে দেখা যায়নি, তাই ২০২৫ সালের চন্দ্রগ্রহণটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আলোকিত আকাশ:
ব্লাড মুনের সময়, চাঁদের রক্তিম আভা দেখতে অনেকটা সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়ের সময় আকাশের রঙের মতোই মনে হতে পারে। তবে, এটি আকাশের কোনো সাধারণ রঙ পরিবর্তন নয়, বরং একটি মহাজাগতিক প্রক্রিয়া, যেখানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যালোকের বিশেষভাবে রঙ পরিবর্তিত করতে সাহায্য করে।
১৩ বা ১৪ মার্চ ২০২৫-এ আসন্ন ব্লাড মুন চন্দ্রগ্রহণ একটি বিস্ময়কর মহাজাগতিক ঘটনা হবে, যেখানে চাঁদ রক্তিম বর্ণ ধারণ করবে। এটি এক বিরল দৃশ্য এবং পুরো বিশ্বের আকাশপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাসে স্থাপিত হবে।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক