ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

নতুন ভূমি যুক্ত হয়ে বড় হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নতুন ভূমি যুক্ত হয়ে বড় হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র

ছবি:সংগৃহীত

জলবায়ুর কারণে যখন অনেক দেশ সমুদ্রের ভূগর্ভে হারিয়ে যেতে চলছে। ঠিক তখনই বাংলাদেশের সাথে নতুন জমি সংযোজন হচ্ছে । স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের মোট আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। তবে ভূমি পুনরুদ্ধার ও সমুদ্র সীমার সম্প্রসারণের কারণে এখন এটি দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটারে। অর্থাৎ গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সাথে প্রায় ৮৯০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি যুক্ত হয়েছে। যেটি কোন দেশের ছোট শহরের চেয়েও বড়।

যখন মালদ্বীপ কিরিবাতি টুভলুর মতো দেশগুলো সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছে, তখনই প্রতিবছর বাংলাদেশের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা কি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল নাকি প্রকৃতির দান?  বাংলাদেশের গাঙ্গেয় বদ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল, যা প্রাকৃতিক এবং ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। এই বদ্বীপের উর্বর ভূমি, জলবায়ু এবং নদী প্রবাহের পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের এই ভূমিতে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলি জমা হয়ে নতুন ভূমি তৈরি হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় ভূমি বিলীনও হয়। ভাঙ্গা-গড়ার এই খেলায় প্রতিবছর ঘরে ২০ বর্গকিলোমিটার ভূমি বাংলাদেশের মানচিত্র যোগ হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি জেগে ওঠা নতুন প্রায় ৫০ টির মত দ্বীপ নতুন একটি বাংলাদেশের হাতছানি দিচ্ছে। যেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে মালদ্বীপের আশি শতাংশ পানির নিচে ডুবে যাওয়া সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি যুক্ত হচ্ছে ।এভাবে ৫০ বছর ভূমি বৃদ্ধি পেলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটারে পৌঁছাবে

গাঙ্গেয় বদ্বীপ মূলত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, এবং মেঘনা নদী এবং তাদের শাখানদী দ্বারা গঠিত হয়েছে। এই তিনটি প্রধান নদী ও তাদের শাখানদী বছরে হাজার হাজার টন মাটি এবং বালি ভাসিয়ে নিয়ে আসে। নদীগুলোর মোহনা ও তীরবর্তী অঞ্চলে এই মাটি জমে বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। নদী প্রবাহের মাধ্যমে মাটির স্তর জমে এবং নতুন ভূমির সৃষ্টি হয়। গাঙ্গেয় বদ্বীপ গঠনের সময় ভূমির উচ্চতা সমুদ্রতলের তুলনায় কম ছিল। ভূমিকম্প এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে বদ্বীপ অঞ্চলের অববাহিকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই জলবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট প্লাবন ভূমি এবং জলাভূমি বদ্বীপ অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। গাঙ্গেয় বদ্বীপে তীব্র বর্ষা মৌসুমের সময় প্রবাহিত নদীগুলির জলস্তর বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নদী সীমানা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া বদ্বীপের বিস্তারকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতিটি নদীর মোহনা এবং তীরবর্তী এলাকায় জমা হওয়া উপাদানগুলি বদ্বীপের ভূমি গঠনে অবদান রাখে।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×