ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

আগে বিচার পরে ভোট

বিচার,সংস্কার এরপর নির্বাচন শহীদ পরিবারের চাওয়ার সঙ্গে ছাত্রদের ঐক্যমত

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ০২:২৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১২:৫৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগে বিচার পরে ভোট

ছবি : সংগৃহীত

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কবে? এ নিয়ে চলছে রাজনীতির মাঠে গরম হাওয়া। বিএনপি-বামদলসহ বেশ কয়েকটি দল চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন দিতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছেন। সভা সেমিনারে বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিদিনই দলের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে একটি ডেডলাইন দিয়েছেন। এক ভাষণে ড. ইউনূস জানিয়েছেন,  ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আবার সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। এই সময়ের মধ্যে  চব্বিশের গণহত্যার বিচার কতদূর আগাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। দুই হাজার শহীদ পরিবার, অর্ধলক্ষ আহত এবং স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের বড় অংশ বলছেন বর্তমান সরকারের অনেক গুলো কাজের মধ্যে প্রধান কাজ হচ্ছে, চব্বিশের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। ছাত্রজনতার রক্তের বিজয়ের মধ্যে এই সরকার গঠন হয়েছে। তারা যদি গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে নির্বাচন দিয়ে দেন তাহলে শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং পুরো জাতির কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। বিচারের আগে নির্বাচন হলে এই সরকার ব্যর্থ হবেন বলেও জানানো হচ্ছে।

শহীদ পরিবারের সঙ্গে ছাত্রজনতার বড় অংশ বলছেন, এই হাসিনা সরকারের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বিদায় হয়নি। রাজনৈতিক আন্দোলন করে বিএনপি ১৭ বছরে খালেদা জিয়ার মুক্তি, গুম, খুন ও তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে পারেনি। আবার জামায়াতে ইসলামীও আন্দোলন করে তাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি থেকে বাঁচাতে পারেনি। সকলের অংশগ্রহণে হাসিনার পতন হয়েছে। তাই এই সরকারকে সর্ব অবস্থায় শহীদ পরিবার এবং শিক্ষার্থীদের দাবীর দিকে লক্ষ্যে রাখতে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- নির্বাচনের রোডম্যাপের বার্তার ইঙ্গিত পেয়ে শহীদ পরিবারের বড় একটি অংশ থেকে তিন শব্দে একটি দাবী তুলেছেন। তা হলো , "বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন"। সংস্কার এবং নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই দুই হাজার শহীদের গণহত্যার  বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যদি বিচারের আগে কোনো নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দেন তাহলে শহীদ পরিবার রাস্তায় নামবেন বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে শহীদ এবং আহত পরিবারের আলাদা অ্যালায়েন্স গঠন করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শাহবাগে আলাদা কর্মসূচী পালন করে সন্তান হত্যা, স্বামী হত্যা, ভাই হত্যার বিচার চেয়েছেন।

প্রকাশ্যে দিবালোকে এতোবড় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও কেন দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগুচ্ছে না তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। যদি বিচার নিশ্চিতে শহীদ পরিবার রাস্তায় নামতে হয় তাহলে এটা হবে এই সরকারের বড় লজ্জা বলেও ছাত্রদের অংশ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। যে তিন দাবীর কথা শহীদ পরিবার জানাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সকল শিক্ষার্থী একমত। প্রয়োজনে বিচার নিশ্চিতে তাঁরা নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।  

যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘জুলাই চার্টারের’ ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, সেটা সবাই অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো সাইন বা সই করবে। সেই সাইনড ডকুমেন্টটা হবে জুলাই চাটার্ড।  আর জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নির্বাচনটা কবে হবে।

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে, ততই রাজনীতি সহজ হবে, নির্বাচনটা হওয়া দ্রুত দরকার। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হোক। ইসি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। যৌক্তিক সংস্কারের পর যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে বলে জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম জনকন্ঠকে বলেন, স্বৈরাচার হাসিনাকে সরাতে আমাদের হাজারের অধিক ভাই বোন শহীদ হয়েছেন যাদের তথ্য আমরা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পেয়েছি এই সংখ্যা আরও বড় হবে। এছাড়া অর্ধ লক্ষ মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। খুনি হাসিনাসহ যে সকল এমপি মন্ত্রীদের নির্দেশে এই গণহত্যা হয়েছে তাদেরকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বড় দায়বদ্ধতা সবকিছুর আগে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। শহীদদের রক্তের উপর এই সরকার গঠন হয়েছে। এই সরকারের ছয়মাস পেরিয়ে গেছে । এখনো হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় সেভাবে এগোয়নি।  যতটুকু আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। এই অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন থাকুক না কেন,  নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই এই সরকারকে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে যেতে হবে। সরকার যদি নির্বাচন দিতেই চায় অবশ্যই অবশ্যই তার আগে ছাত্রজনতার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এটা যদি না করতে পারে তাহলে এটা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এটা যদি সরকার করে যেতে না পারে সকল শহীদ পরিবার, আহত এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজীবন দায়বদ্ধ থাকতে হবে। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিৎ ছিলো গণহত্যার বিচার। যারা গণহত্যায় জড়িত তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করা। সারা বাংলাদেশের মানুষ বিচার দেখার অপেক্ষায় আছে আমরাও আছি। যত দ্রুত হওয়া উচিৎ ছিলো সেটা হচ্ছে না। আমি আশা রাখছি এই সরকার খুব দ্রুত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করবে। এই সরকারের এটাই মূল কাজ। আলাদা ট্রাইব্যুনালে চব্বিশের জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী হত্যার বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমি আবারও বলছি, এই সরকারের মূল কাজ যারা গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার উপর গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার সবার করা। আমরা সংস্কার বিচার অবশ্যই চাই তার আগে আমাদের চাওয়া শহীদ পরিবার যেমন তাদের স্বজন হত্যার বিচার নির্বাচনের আগেই চান। আমরাও চাই নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা হোক। শহীদ পরিবারের চাওয়ার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। শহীদ পরিবার যদি বিচারের জন্য রাস্তায় নামেন তাহলে এটি হবে আমাদের সবার জন্য লজ্জার। এরপরও যদি শহীদ পরিবার বিচারের জন্য রাস্তায় নামেন আমরা পাশে থাকবো এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি।
 

 

মো. মহিউদ্দিন

×