ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ: জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ: জাতিসংঘ

ছবি : সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়েছে।

জেনেভা থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারীদের ওপর হামলা প্রায়শই তাদের মুখ, বুক, শ্রোণী ও নিতম্বের মতো নির্দিষ্ট অঙ্গকে লক্ষ্য করে করা হত।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, “এ ধরনের হামলার উদ্দেশ্য ছিল শুধু শারীরিক ব্যথা দেওয়া নয়, বরং নারীদের লিঙ্গের ভিত্তিতে অপমান ও অবমাননা করা।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারী বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতা প্রায়শই লিঙ্গভিত্তিক ছিল, যার মাধ্যমে আন্দোলনের মধ্যে নারী নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ ধরনের সহিংসতার মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতিকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।

“নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার প্রমাণ”

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারাও ধর্ষণের হুমকি, জোরপূর্বক নগ্ন করা ও অন্যান্য যৌন সহিংসতার ভয় দেখিয়ে নারী আন্দোলনকারীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।

ওএইচসিএইচআর দাবি করেছে, তারা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত শারীরিক যৌন সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে।

একটি ঘটনায়, আগস্টের শুরুতে ঢাকায় বাঁশের লাঠি হাতে একদল ব্যক্তি এক নারীকে আটক করে এবং জানতে চায় তিনি বিক্ষোভকারী কিনা। তার ব্যাগ ও ফোন তল্লাশি করে একটি বাংলাদেশি পতাকা পাওয়ার পর তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, চুল ছিঁড়ে ফেলা হয়, জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়, বুকে আঁচড় দেওয়া হয় এবং যৌনতাসূচক গালিগালাজ করা হয়।

অন্য একটি ঘটনায়, জুলাই মাসে ঢাকায় ছাত্রলীগের দুই সমর্থক এক নারী বিক্ষোভকারীকে ও তার মাকে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

এছাড়াও, কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন ছাত্রীকেও ছাত্রলীগের সদস্যরা লাঞ্ছিত করেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার শিকার নারীরা কার্যকর আইনি প্রতিকার পাচ্ছেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ভুক্তভোগীরা আইনি ব্যবস্থা নিতে ভয় পান, বিশেষ করে যদি অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়। এছাড়া সামাজিক কলঙ্কের ভয়েও অনেকে অভিযোগ করতে চান না।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, “অনেক ভুক্তভোগী চিকিৎসা, মনোসামাজিক ও আইনি সহায়তা পান না। এমনকি যারা অভিযোগ করতে চান, তাদেরও যথাযথ সুরক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া হয় না।”

ওএইচসিএইচআর বলেছে, “প্রতিবেদনে নথিভুক্ত সহিংসতার ঘটনা সম্ভবত আসল চিত্রের তুলনায় কম। আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা প্রকাশ পায়নি।”

তাই জাতিসংঘ “লিঙ্গ-সংবেদনশীল তদন্ত পরিচালনা ও যৌন সহিংসতার শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার” সুপারিশ করেছে।

মো. মহিউদ্দিন

×