ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সংলাপে মাইকেল মিলার

স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে সফল দেখতে চায় ইইউ

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে সফল দেখতে চায় ইইউ

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে সফলভাবে স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় সমমনা অংশীদার হতে দেখতে চান।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ ২.০-এর উত্থান দেখতে চায় এবং এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালের পরও বাংলাদেশের ধারাবাহিক অংশীদার হতে চায়। মিলার আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশের এই পরিবর্তন সফল হোক। এটি সফল করতে যা কিছু প্রয়োজন তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে ইউরোপীয়  ইউনিয়ন। এজন্য আমরা এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বের দক্ষতা, বিনিয়োগ এবং ধারাবাহিকতার প্রস্তাব দিয়ে এসেছি।
‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা কসমস ফাউন্ডেশন এবং বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় সোমবার সন্ধ্যায় কসমস ডায়ালগের অধীনে রাষ্ট্রদূতদের বক্তৃতা সিরিজের অংশ হিসেবে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মিলার অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্ত সংস্কার উচ্চাকাঙক্ষাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন করতে চায় সেটির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। মিলার বলেন, তাদের পক্ষে এই সম্পর্কটি সর্বাধিকভাবে চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, এদেশে যথাযথ প্রক্রিয়া রয়েছে, আইনের শাসন সমুন্নত রয়েছে এবং এসব অধিকার ব্যতিক্রম ছাড়াই প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, মানবাধিকার সবার জন্য। এটি শুধু ইউরোপীয় নয়, সর্বজনীন এবং সব দেশের নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। সব দেশেই রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া থাকা জরুরি। এ ছাড়া ফৌজদারি অপরাধ ইত্যাদির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগে আটক না হলে মানুষ কারাগারে থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন মিলার।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, এই মুহূর্তে যা অনুমান করা যায় তা হল প্রায় সবকিছুই অপ্রত্যাশিত, এবং তারা বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নেও একটি উত্তরণের মুহূর্ত দেখতে পাচ্ছে। ‘এখানে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ রয়েছে যা এই পরিবর্তনের মুহূর্তের সঙ্গে এসেছে। 
কসমস ফাউন্ডেশন ও বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, সেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত প-িত-কূটনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সম্মানিত উপদেষ্টা ইমেরিটাস, কসমস ফাউন্ডেশনের রাষ্ট্রদূত (অব.) তারিক এ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন; কসমস গ্রুপের ডিএমডি ও বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ খান এবং কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্য  কসমস ফাউন্ডেশন ও বে অব বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। কৌশলগত সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব এবং বিশ্বব্যাপী  সম্পৃক্ততার যুগের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে। আমরা যখন বাংলাদেশ ২.০ নামে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি, তখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রচেষ্টার জন্য ইইউ থেকে সমর্থন আবশ্যক। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মুক্ত করতে দুর্বল দক্ষতা উন্নয়নের ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষকে আমরা কীভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সহনীয় আনতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। উষ্ণায়নের মাত্রাকে ধীরগতি করতে নতুন করে মূল্যায়নে প্রবেশ করতে হবে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়গুলো আমাদের কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং জলের প্রাপ্যতার পরিস্থিতির অস্তিত্বের ক্ষতি না করে সেটিও উল্লেখ করেন তিনি।
ডক্টর ইফতেখার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করছে। আমি  আশা করছি এটি হবে একটি সফল সহযোগিতা। বাংলাদেশ এখন গ্র্যাজুয়েশনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখার বলেন, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন ধরনের সম্পর্ক আরোপ করবে।

নতুন ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল্যবোধগুলো ইইউ  নিজেই সংরক্ষণের জন্য সম্ভবত সংগ্রাম করছে বলেও তিনি যোগ করেছেন। রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, আমরা আজ ক্রান্তিকালে, এমনকি ইউরোপও আজ ক্রান্তিকালে। বিশ্ব আজ একটি পরিবর্তনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। 
অধ্যাপক তিতুমীর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশ এবং ইইউকে অবশ্যই জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনে সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে। তিনি বলেন, ইইউকে জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইইউ একটি ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারে যা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, সামাজিকভাবে ন্যায্য, পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে স্থিতিস্থাপক। 
অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ইইউ-এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটি দৃঢ় অংশীদারিত্ব যা তারা বিশ্বাস করতে পারে এবং অনেক বিষয় ও অভিন্নতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্র তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা বিকাশে সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রোহিঙ্গা ইস্যুতে পতাকা তুলেছেন, উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলিতে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এবং কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের জন্য সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা তৈরি করতে পারে তা ভেবে দেখতে হবে।

×