ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

কোটি টাকা অপচয় জেনেও হাসিনার প্রকল্প বাস্তবায়ন, দুর্নীতি নাকি ক্ষোভ?

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোটি টাকা অপচয় জেনেও হাসিনার প্রকল্প বাস্তবায়ন, দুর্নীতি নাকি ক্ষোভ?

ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে 'ক্যাপিটাল ড্রেজিং' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনে যমুনা নদীর দুটি এলাকায় পাইলট প্রকল্প পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—একটি সিরাজগঞ্জে এবং অন্যটি কুড়িগ্রামে। গবেষকদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে এবং প্রকল্পের ব্যর্থতার সম্ভাবনা জানার পরও এটি বাস্তবায়ন করা হয়।

গবেষণার সতর্কবার্তা

গবেষণা দল দীর্ঘ বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত হয় যে, সিরাজগঞ্জে নির্দিষ্ট স্থানে ড্রেজিং কার্যকর হবে না। গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, এতে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক চাপের মুখে এই সতর্কবার্তা পরিবর্তিত হয়, এবং প্রকল্প অনুমোদনের পথ সুগম করা হয়।

প্রশাসনিক চাপ ও তথ্য গোপন

গবেষক দল প্রকল্পের ঝুঁকি সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায়কে অবহিত করার চেষ্টা করলেও, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রিপোর্ট পরিবর্তনের। মূল গবেষণা প্রতিবেদন পরিবর্তন করে সংশোধিত রিপোর্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পের বাস্তবতা তুলে ধরতে গবেষক দল সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর সহযোগিতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রকৃত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সেটি গুরুত্ব পায়নি।

শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গবেষক দল ব্যাখ্যা করে কেন যমুনার নির্দিষ্ট স্থানে ড্রেজিং কার্যকর হবে না। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে যে, এতে বিশাল আর্থিক ক্ষতি হবে। কিন্তু উপস্থিত অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীরা গবেষণার বিপক্ষে অবস্থান নেন। শেখ হাসিনা চূড়ান্তভাবে বলেন, "ড্রেজিং হবে এবং এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।" গবেষকদের সমস্ত যুক্তি উপেক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া ও হয়রানি

মিটিং শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব গবেষকের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং কটূক্তি করেন। পরবর্তীতে, গবেষক দলকে প্রশাসনিকভাবে চাপে রাখা হয় এবং তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ সীমিত করা হয়।

প্রকল্পের ব্যর্থতা ও ক্ষতির পরিমাণ

পরবর্তীতে বাস্তবে দেখা যায়, গবেষকদের আশঙ্কাই সত্যি হয়—ড্রেজিং প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কৌশলগত ভুলের কারণে কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়। তবুও, এই ব্যর্থতার জন্য কেউ জবাবদিহির আওতায় আসেনি।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/p/1AvqGsp5vK/

মারিয়া

×