ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারত-বাংলাদেশ দ্বন্দ্ব চলমান, কিন্তু বাড়ছে বিয়ের সংখ্যা?

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারত-বাংলাদেশ দ্বন্দ্ব চলমান, কিন্তু বাড়ছে বিয়ের সংখ্যা?

ছবি: সংগৃহীত

ভালোবাসার কোনো সীমানা নেই, রাজনীতিরও না। ২০২৪ সালে ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিবাহের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে ২০২৩ সালের তুলনায়। ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১০০ জন বাংলাদেশি নারী ভারতীয় পুরুষদের সঙ্গে বিবাহের জন্য আবেদন করেছেন এবং ১১ জন বাংলাদেশি পুরুষ ভারতীয় নারীদের সঙ্গে বিবাহের আবেদন করেছেন। এটি গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যা এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৪৮৬টি আবেদন করা হয়েছে, যার ২৩% ছিল ২০২৪ সালে।

পরিবর্তিত প্রবণতা

ঠিক কতজন বাংলাদেশি এই বিবাহের পর ভারতে স্থায়ী হচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে কর্মকর্তাদের ধারণা, তাদের একটি বড় অংশ ভারতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেবেন। এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা অনুমান করতে পারি যে অনেকেই ভারতে স্থায়ী হবেন, বিশেষ করে নাগরিকত্ব আইন বিবেচনায় রেখে।"

ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করেন এবং টানা সাত বছর ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাস করেন, তাহলে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া, যদি কোনো ব্যক্তির এক বা উভয় পিতা-মাতা ভারতীয় হন, তাহলে তাদের সন্তান জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন।

গত পাঁচ বছরে ৪৮৬ বাংলাদেশির ভারতীয়দের সঙ্গে বিবাহ

একজন কর্মকর্তা বলেন, "এই সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ, তবে ২০২৪ সালের আগস্টের আগে ও পরের তথ্য বিশ্লেষণ করলেই সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হবে।"

তথ্য অনুযায়ী, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশি নারীরাই বেশি ভারতীয় পুরুষদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। গত পাঁচ বছরে ৪১০ জন বাংলাদেশি নারী ভারতীয় পুরুষদের বিয়ে করেছেন, যেখানে ৭৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ ভারতীয় নারীদের বিয়ে করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিবাহ রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে করা ১১১টি বিবাহ আবেদনের মধ্যে ৭৯ জন বাংলাদেশি কনে ছিলেন হিন্দু, ১৬ জন মুসলিম এবং ৫ জন খ্রিস্টান। অপরদিকে, বাংলাদেশি বরদের মধ্যে ৯ জন হিন্দু এবং মাত্র ২ জন মুসলিম ছিলেন।

২০২৩ সালে বাংলাদেশি কনে ও বরদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তবে সেই বছরের মোট বিবাহের আবেদন সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৪, যার মধ্যে ৪৪ জন কনে এবং ১৩ জন বর ছিলেন।

বিবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ

বাংলাদেশ থেকে হঠাৎ বিবাহের আবেদন বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত, ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হওয়ার সুযোগ এবং দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অক্টোবর ২০২৩ সালের নিয়ম পরিবর্তন, যা বিদেশিদের ভারতীয়দের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করেছে।

নতুন নিয়ম অনুসারে, বৈধ ভিসা থাকা বিদেশিরা যদি ৩০ দিনের নোটিশ পিরিয়ডের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে থাকেন এবং তারা একটি হলফনামা দেন যে তারা অবিবাহিত, তাহলে তারা ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহ করতে পারবেন।

এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয়দের সঙ্গে বিবাহের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিশ্লেষণ করতে আরও সময় লাগবে।

মারিয়া

×