
ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং নগর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
“প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতেই হবে।এছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই”- সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে গতকাল শনিবার পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তাঁর মতে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, রাজধানী ঢাকা অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং নতুন করে আরও মানুষকে এই শহরে বসবাসের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।
উপদেষ্টার মতে, “ঢাকায় যত আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক না কেন, এই শহর অতিরিক্ত মানুষের ভার বহন করতে পারছে না।” বিশ্বের জনবহুল রাজধানীগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম এবং কোনো শহরেই প্রতি বর্গকিলোমিটারে এত সংখ্যক মানুষ বাস করে বলে জানা নেই। ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ এখন সময়ের দাবি।
রাজউকের ‘লিভেবল ঢাকা’ উদ্যোগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা নগরীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ দেখাবে। নতুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক শহরকে সবুজায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সমস্যা খাল ও জলাধার দখল হয়ে যাওয়া। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তিনি নিজেই বাদী হয়ে ৫০টি খাল পুনরুদ্ধারের মামলা করেছেন এবং বর্তমানে ১৯টি খালের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ, দখলদার উচ্ছেদ, পানির প্রবাহ বাড়ানো এবং পাড়ের উন্নয়ন-এই চারটি স্তরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের তোতাইল বিল সম্পূর্ণ ভরাট করে প্লট বিক্রির চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজউকের উদ্যোগে এই প্লট ও হাউজিং কোম্পানির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিল পুনরুদ্ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার ঢাকাকে বাসযোগ্য করার উদ্যোগ শুরু করেছে এবং ভবিষ্যৎ সরকারকে এই কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প না নিয়েই বিদ্যমান সম্পদ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নগর ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছে।
ঢাকার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সুপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনার ওপর। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, সবুজায়ন, জলাধার পুনরুদ্ধার এবং দখল রোধের মাধ্যমে একমাত্র এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। বর্তমান উদ্যোগগুলো যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ঢাকাকে পুনরায় বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করা সম্ভব হবে।
সূত্র: https://tinyurl.com/2x6bz2ry
আফরোজা