ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক এখতিয়ার বাড়লো

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক এখতিয়ার বাড়লো

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর সংশোধন করা হয়েছে এ সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের আইন। তবে সর্বশেষ সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার বাড়িয়েছে সরকার।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালকে জুলাই-আগস্টে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন‍্য ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান এবং বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও সাবেক বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। 

পরে ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে হত্যার অভিযোগে বিচারকাজ শুরু হয়।

তবে বিচারের ক্ষেত্রে এ সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধনীর প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব গত ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পায়। জাতীয় সংসদ চলমান না থাকায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ অধ্যাদেশ জারি করেন।

‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ নামের এই আইনের ৪, ৮, ৯, ১১, ১২ ও ১৯ নম্বর ধারা সংশোধন করা হয়েছে। আইনটির ৪ নম্বর ধারা সংশোধন করে আগ্রাসনকে বর্ণনা করা হয়েছে শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে।

৮ নম্বর ধারার (৩এ) উপধারায় বলা ছিল, তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে তল্লাশি ও আলামত জব্দ করতে পারবেন। তবে সংশোধনী আইনের ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। ৯ নম্বর ধারার (৩) উপধারায় বিচার শুরুর ছয় সপ্তাহ আগে সাক্ষীর তালিকা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের বিধান ছিল, যা সংশোধনের মাধ্যমে তিন সপ্তাহ করা হয়েছে।

আইনটির ১১ নম্বর ধারায় একটি নতুন উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। নতুন যুক্ত (৯) উপধারায় বলা হচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল আসামির সম্পদ অবরুদ্ধ বা জব্দের আদেশ দিতে পারবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সেসব সম্পদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।

আইনের ১২ নম্বর ধারার (৩) উপধারায় বলা ছিল, ট্রাইব্যুনালের মামলার প্রতিবেদনসহ নথি হবে গোপনীয়। এখন ওই নথির সঙ্গে অভিযোগও যুক্ত করা হয়েছে।

১৯ নম্বর ধারায় একটি নতুন উপধারা (৫) সন্নিবেশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্যের কারিগরি নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ থাকবে না, এছাড়া দ্রুত ও অ-কারিগরি পদ্ধতি গ্রহণ এবং প্রয়োগ করতে পারবে। এর আগে আইনটির সংশোধনীর বিষয়ে কিছু মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আগে ট্রাইব্যুনালের কোনও ডকুমেন্ট নিতে গেলে কোর্টের পারমিশন নিতে হতো, এখন সেটির দরকার নেই। এখন তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে তল্লাশি ও আলামত জব্দ করতে পারবেন। সাক্ষীর তালিকা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ছয় সপ্তাহের স্থলে সংশোধনীর মাধ্যমে তিন সপ্তাহ করা হয়েছে। এসব সংশোধনীর ফলে বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়বে বলে আমি মনে করি।’

শহীদ

×