ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে ৩৫৪টি প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে ৩৫৪টি প্রস্তাব

আরও ক্ষমতা বাড়াতে চান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)

বিচারিক ক্ষমতার পাশাপাশি অধিক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে আরও ক্ষমতা বাড়াতে চান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে।

পাশাপাশি ডিসিদের জেলা এবং ইউএনওদের উপজেলার হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি করার প্রস্তাব এসেছে। এতে স্বাস্থ্যসেবায় বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা বন্ধ হবে। ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এ দুটিসহ মোট ৩৫৪টি প্রস্তাব করেছেন বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এবং ইউএনওরা। আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আজ থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকদের এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনে প্রত্যেক অন্যবারের মতো এবারও জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সম্মেলনে উপদেষ্টা-সচিবদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং সেসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, আজ সকালে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে হবে। এর আগের বছর (২০২৪) ডিসি সম্মেলন হয় চারদিন। গত বছরে ৩ থেকে ৬ মার্চ ডিসি সম্মেলন হয়।
সরকারের নীতিনির্ধারক এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতিবছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হতো। এবার ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন, এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।
কার্য-অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছেন। অধিবেশনের সময় এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন। কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
উল্লেখ্য, সরকারের কর্মকা- মাঠপর্যায়ে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয় ও উন্নয়ন কর্মসূচি বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের দিকনির্দেশনা দিতে আয়োজন করা হয় জেলা প্রশাসক সম্মেলন। কেন্দ্রের নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের বাস্তবতা তুলে আনাও এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিচারিক ক্ষমতা ফিরে পেতে চান ডিসিরা। ডিসিরা আবারও সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকির ক্ষমতা চেয়েছেন। গত বছর একই দাবি উত্থাপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয়। তাদের উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির ক্ষমতা দিয়ে গত বছর ১৮ জুলাই আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির ক্ষমতা প্রদানের প্রতিবাদে প্রকৌশলীদের সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশ শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকির ক্ষমতা বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারি রাজস্ব প্রশাসনের উন্নয়ন বরাদ্দে ডিসিদের আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ক্ষমতা দেওয়া হলে বিভিন্ন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করছেন গণপূর্ত ও এলজিইডি বিভাগ। এসব কাজের প্রকল্প গ্রহণ, প্রাক্কলন প্রস্তুত, অনুমোদন, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন কোনোটির সঙ্গেই ডিসি বা তার প্রতিনিধি রাখা হয় না।

তাদের খেয়ালখুশি মতো প্রকল্প  তৈরি করে নিজেদের মতো করে বাস্তবায়ন করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন তারা। ঠিকাদার কাজ শেষ না করলেও শতভাগ বিল তুলে নেয়। আবার প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে সরকারের অর্থ অপচয় করা হয় বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেছেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের হার কমেছে। গতবছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কমেছে। এ পর্যন্ত ২০২৪ সালের সম্মেলনের মাত্র ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। শনিবার সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নাধীন ২০৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ শতাংশ। যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনাধীন, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন হিসেবে দেখানো হয়েছে।

যেসব সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বা সিদ্ধান্তের অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয়ের যথাযথ তৎপরতা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকায় জেলাপ্রশাসক সম্মেলন ২০২৪-এ গৃহীত সিদ্ধান্তের শতকরা ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে, বিগত জেলাপ্রশাসক সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়বে।’
গত বছর (২০২৪) ডিসি সম্মেলন চলাকালে এর আগের বছরের (২০২৩) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশ, ২০২৫-এ এসে দেখা গেছে ২০২৩-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল ৭৬ শতাংশ বলেও জানান শেখ আব্দুর রশীদ। গত ডিসি সম্মেলনে নেওয়া বিভিন্ন স্থাপনার নাম বিশেষ কোনো ব্যক্তির নামে করার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ডিসি সম্মেলনে উঠছে ৩৫৪ প্রস্তাব ॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে রবিবার। সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বছরের মতো এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।
তিনি বলেন, সম্মেলনে এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট কার্য-অধিবেশন হবে ৩০টি এবং চারটি হবে বিশেষ অধিবেশন। বিশেষ অধিবেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ, প্রথম উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও একটি সভা হবে। ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৪টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

×