
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়
গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে ও তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, প্রতিজ্ঞা করি আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই।
যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগ সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সব রকম চেষ্টা করব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ কথা বলেন ড. ইউনূস। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাঙ্গামার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জাতিসংঘের রিপোর্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতি সারাবিশে^র ধারণা বদলে দিয়েছে বলেও জানান। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সারা বিশে^ জনমত গড়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। বৈঠকে ২৬ দলের শতাধিক নেতা অংশ নেন।
এ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এই দলে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ছিল ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
তারা হলেন নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এএইচ এম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মশিউল আলম। ইসলামি আন্দোলন ও খেলাফত মজলিশের নেতারাসহ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, গণ ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসব দলের অধিকাংশ নেতা সংস্কার কার্যক্রম ও দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহবান জানান।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার আমাদের কোনো সুযোগ থাকত না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস পার হয়ে গেল, প্রথম অধ্যায় শেষ, আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করলাম উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব।
সে প্রস্তুতি পর্বের অনেক কিছু আপনাদের জানা। তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল প্রস্তুতি, যে স্বপ্নের পেছনে ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগ করেছে সেটা সার্থক করতে আমরা যেন এমন একটা দেশ গড়তে পারি যেটা সুশৃঙ্খলভাবে চলবে। যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা অন্যরূপে বেরিয়ে চলতে পারি।
গত ৬ মাসে রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়াও পৃথিবীজুড়ে আমাদের প্রতি সমর্থন গড়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কারণে অপরপক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। বহু গল্প ফাঁদছে, গল্প টেকাতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের হাতিয়ার, গল্প চালাতে গিয়ে চালাতে পারল না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছোট রাষ্ট্র বড় রাষ্ট্র, ধনী রাষ্ট্র ও মাঝারি রাষ্ট্র সবাই আমার পরিচিত, তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই। তাদের ভাষা শুনলে আমার অবাক লাগে। তাদের সঙ্গে যখন কথা বলতে বসি তারা কোনো কিছু শোনার আগেই বলে কি লাগবে বলো। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই সমর্থন থাকা সত্ত্বেও আমরা যদি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি, এটা আমাদের কপালের দোষ ছাড়া আর কি বলবো। আমরা এই সুযোগ হারাতে চাই না।
আন্তর্জাতিক মহলেও আমাদের জিজ্ঞেস করে তোমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করতে পারি কিন্তু সংস্কারের ব্যাপারে আমরা সাহায্য করতে পারব না। আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন, সহায়তা এবং শুভেচ্ছা, এটা আমাদের জন্য মস্তবড় সম্পদ। কোনো কোনো শক্তিমান রাষ্ট্র এও বলেছে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সব ধরনের সহায়তা করবে।
জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সারা পৃথিবীতে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি প্রতিবেদন সারা পৃথিবী বদলে গিয়েছে। আর কত সমর্থন চাই আমরা।
একেবারে অক্ষরে অক্ষরে বলে দিয়েছে কোথায় কীভাবে মেরেছে, এর থেকে বের হওয়ার তো কারও উপায় নাই। বাংলাদেশকে ঘিরে যে অপপ্রচার চলছিল, এই এক প্রতিবেদন সমস্ত সমাপ্ত। বলতে পারবে, কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হবে না। আরও অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের (আওয়ামী লীগের) প্রতিবেদনে অত্যন্ত জোরালোভাবে তাদের অপরাধের কথা উঠে এসেছে।
আয়নাঘরের নির্মমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সেদিন আয়নাঘরে গেলাম, মানুষ কত নির্মম হতে পারে, বীভৎস দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে, নৃশংস হতে পারে, এর চেয়ে বড় নমুনা বোধহয় পাওয়া যাবে না। আমাদের শুধু দেখতে কষ্ট লেগেছে, যারা বছরের পর বছর সেখানে থেকেছে তাদের প্রতিটি বর্ণনা, অভিজ্ঞতা গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ প্রথম বুঝতে পারল আমরা কিসের কথা বলছি, আমরা কোথা থেকে এসেছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যাদের (ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার) বাংলাদেশের মানুষ তাড়িয়ে দিয়েছে, অস্বীকার করেছে, ত্যাগ করেছে তারা ফিরে আসার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল। প্রতিটি দিন তাদের জন্য মূল্যবান দিন। দেরি হলে তাদের জন্য অসুবিধা। সেজন্য আমাদের শক্ত থাকতে হবে মজবুত থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকবে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা একত্রে নই।
তিনি বলেন, গত ছয় মাস ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। একটি ল-ভ- অবস্থায় দেশের দায়িত্ব নিয়েছি। চেষ্টা করছি কোনো রকমে সচল করার জন্য। কিন্তু এ ছয় মাসের যে অভিজ্ঞতা সেটা আমাদের সবাইকে প্রচ- সাহস দেবে।
এ ছয় মাসের অভিজ্ঞতা হলো আমাদের দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নেতৃত্বসহ সবাই যে সমর্থন দিয়েছে তা বড় আকারে লেখা থাকবে যে আমরা একত্রিত হতে পারি। আমাদের মধ্যে অনেক তর্ক-বিতর্ক থাকবে, দূরত্ব সৃষ্টি করার হয়তো প্রবণতা আছে। কিন্তু এ একটি জায়গায় আমরা এক আছি ও থাকব, সে বিশ্বাস আমার আছে।
তিনি বলেন, এটা যদি ঠিক থাকে, যেভাবে আমরা প্রথম অধ্যায় শেষ করলাম, দ্বিতীয় অধ্যায়ে যদি আমরা ঠিক থাকতে পারি তাহলে তৃতীয় অধ্যায়ের জন্য আমাদের কোনো চিন্তা নেই, নিশ্চয়ই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব। এ একটা জিনিস আমাদের পরিষ্কার থাকতে হবে। এটা একটা মস্ত বড় শক্তি।
প্রথম অধ্যায় যেভাবে কাটালাম এবং এ কাটানোর মধ্যে যেসব শক্তি আমাদের ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে, তাদের সুন্দরভাবে সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পেরেছি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাঙ্গামার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। কমিশনের সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথরেখা তৈরিতে ব্যর্থ হলে জাতি ক্ষমা করবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
নতুন বাংলাদেশের পথরেখা তৈরির প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ কাজে ব্যর্থ হলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবেন না। দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও অনেক প্রাণের বিনিময়ে আমরা এখানে এসেছি। ছয়টি কমিশনের প্রস্তাবে সেই পথরেখার কথা উল্লেখ আছে। এখন আমাদের কাজ সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি, বাস্তবায়নের পথ-পদ্ধতি তৈরি করা।
রাষ্ট্রের সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুরু না করলে সেই প্রক্রিয়া অগ্রসর হবে না। ঐকমত্য করতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দলগত ও জোটগত বৈঠক করব। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকা। বিভিন্ন সময়ে আমরা আবারও মিলিত হব।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য যেহেতু এক, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদ্ধতির সংস্কার করা এবং দ্রুততর সময়ে নির্বাচন করা। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের পাশাপাশি বোঝাপড়া তৈরি ও একত্রে কাজ করা জরুরি। আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবেও বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে আপনাদের সহযোগিতা করা, সকলের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও যত দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া। এমন দলিল তৈরি করা যাত নতুন বাংলাদেশের প্রথম রেখা তৈরি করা যাবে।
তবে সূত্র জানায়, এই বৈঠকে সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ আলোচনার অন্যতম ইস্যু ছিল। বৈঠক অন্তত দুই ঘণ্টা হলেও দুই-একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা আগে থেকেই বৈঠক ছেড়ে বের হন। এ সময় বৈঠকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। বিকেল ৫টার পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, বৈঠকে ছোট ছোট অ্যাডভাইস দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কবে হবে, কোনো কোনো দল তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়। আমরা বলেছি যে, আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই না। তিনি বলেন, সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে একটা মারামারি হওয়ার শঙ্কা আছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। গ্রাউন্ড রিয়েলিটি আলাদা। আওয়ামী লীগকে গ্রাউন্ড রিয়েলিটিতে অনেকে মানে না, মেনে নেবে না। এই সন্ত্রাস যেন না হয়, স্থিতিশীল যেন থাকে।
কোনো ধরনের সংস্কারের জন্য যেন জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না হয়, সে বিষয়ে আমাদের তরফ থেকে বলেছি। তিনি বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল আবার চেয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে ভালো হবে।
এ সময় বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কমিশন থেকে বলা হয়েছে কোনো প্রস্তাবনা ঐকমত্য কমিশন বা সরকারের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব তাদের নেই। তিনি বলেন, যেসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হতে পারবে সেই ভিত্তিতে আলাপ আলোচনা করে তারা চেষ্টা করবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করার।
সেই সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী সময় জাতীয় নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে প্রশ্ন তা বিবেচনা করা হবে। সাইফুল হক বলেন, আজকে বিষয়ভিত্তিক কোনো আলোচনা হবে না। এটি একটি উদ্বোধনী সভা। তারা বলেছেন এই সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর, জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন রয়েছে।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় ড. ইউনূস পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছেন, ভারত বাংলাদেশবিরোধী যে নীতি যা আমাদের বিপর্যয়ে ফেলছে। তবে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী দৌড়ঝাঁপ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে অভ্যুত্থান ও জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের নালিশ আমলে নেয়নি সেই কথা স্পষ্ট করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, অনেক কমিশন হয়েছে কিন্তু বৈষম্য বিলোপের ব্যাপারে কোনো কমিশন হয়নি। আমরা এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছি।
যা বলছে বিএনপি ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠক শেষে বলেন, আমরা আশা করব দ্রুত সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে এবং অতি দ্রুত দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বৈঠকে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাদের কাছে সংস্কারের যে রিপোর্টগুলো প্রত্যেকটি কমিশন দিল, সেগুলোর ওপর আলাপ আলোচনা হবে। দলগুলো এটা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে এবং একটা ঐকমত্য পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সেটাই বৈঠকের মূল আলোচনা ছিল। আজকের প্রাথমিক আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছেন।
খুব দ্রুত এই সংস্কারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে এবং সেটা ওপরে ভিত্তি করে অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জাতীয় নির্বাচন না স্থানীয় সরকার নির্বাচন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার বলেছি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার আগে হতে হবে। তারপরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আজকে শুধু প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, আলোচনাটা ছিল পরিচিতিমূলক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কথা বলেছেন সেটা ছিল তাদের নিজস্ব মতামত। একেবারে পজেটিভ কনস্ট্রাকটিভ কোনো আলোচনা আজকে হয়নি, কারণ সুযোগও ছিল না। আজকে পরিচিতি একটা ব্যাপার ছিল আরকি।