ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

কিছু রাজনৈতিক দল ‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে’: মির্জা আব্বাস

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কিছু রাজনৈতিক দল ‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে’: মির্জা আব্বাস

ছবিঃ সংগৃহীত

বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে কিছু রাজনৈতিক দল ‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা আব্বাস।

শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন… কখনও বলেন যাবেন না, কখনো বলেন যাবেন… কখনো বলেন, এটা হলে যাবো, কখনো বলেন ওটা হলে যাবো। আরে ভাই, আপনাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ২০০৮ সালে বিএনপি এবং আমাদের জোট নির্বাচনে গিয়েছিলো, তার ফলোশ্রুতিতে বাংলাদেশের অনেক নামী-দামী, অনেক বিখ্যাত-প্রখ্যাত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে ফাঁসির কাষ্ঠে। ওই রকম ভুল আর করবেন না দয়া করে। একটি ভুল লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে।

‘‘সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো টানবাহানা করবেন না… এটা আমি সরকারকে বলছি না, আমি বলছি এই সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। এই সরকারকে অস্থিতিকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমরা এই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ডিসেম্বরের ঘোষণা দিয়েছেন… ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিন। আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ইনশাল্লাহ।’’

তিনি বলেন, ‘‘যারা নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করছেন, পক্ষান্তরে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করছে, এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছেন, এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য চেষ্টা করছেন।” ‘‘দয়া করে আপনাদের বলব, এসমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকুন।”

‘গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে’ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘অনেকে বলেন, নির্বাচন আগে বিচার শেষ করতে হবে। ভাই, বিচার শেষ করে নির্বাচন করবেন, এটা কি সম্ভব?”

‘‘তিন মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি করে আপনারা বিচার করবেন… পারলে করেন, পারলে করেন, কোনো অসুবিধা নেই… তিন মাসের মধ্যে বিচার করুন, অবিচার নয়… বিচার করতে হবে।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

‘তিন শ্রেণীর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন’ সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মির্জা আব্বাস, ‘‘দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ আমাদেরকে খুবই সাবধান হতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। যদি নবায়নের সময়ে দেখা যায় ওই ব্যক্তি সংগঠন বিরোধী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তার সদস্য পদ নবায়ন করা যাবে না, দলের দুর্নাম হচ্ছে, এমন কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো ব্যক্তিকে সদস্য নবায়ন করা যাবে না।”

‘‘আর আওয়ামী লীগের কিংবা সুযোগসন্ধানী কিছু লোক এই সময়ে দলের নতুন করে সদস্য হওয়ার চেষ্টা করবেন, যারা আমাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না, তারা আমাদের ক্ষতিই করবে। সুতরাং তাদেরকেও আমাদের সদস্য করা যাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘এজন্য বলতে পারেন দলের লোকের সদস্য সংখ্যা কমে যাবে। আমরা কোয়ালিটিতে বিশ্বাস করি, কোয়ানটিটিতে নয়, কোয়ালিটি চাই, ভালো লোক চাই। আমাদের হাজার হাজার লোকের দরকার নেই। আমাদের সলিড খুব ১০টা লোক হলে চলবে।”

‘‘যারা দেশকে ভালোবাসবে, দলকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, প্রয়োজনে ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করবে।”

‘রমজান: সিন্ডিকেটদেরও তৎপরতা বেড়ে গেছে’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘রমজানকে সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বা বাড়ার প্রস্তুতি চলছে। সিন্ডিকেট তাদের কাজ করেই যাচ্ছে, সিন্ডিকেট তাদের কাজ বন্ধ করেনি।”

‘‘সরকারের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সিন্ডিকেটের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং এরা এই সরকারকে একটি বিভ্রান্তিকর অবস্থায় ফেলতে চায়। আমরা যতই বলি এই সরকারকে সহযোগিতা করব, করছি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবো না.. ততই যেন সিন্ডিকেটের কাজকাম বেড়ে যায়, ততই যেন দুষ্কৃতিকারীরা বেশি আশকারা পাচ্ছে। কেন জানি না, অবৈধভাবে সরকারের মধ্যে এমন সব রয়ে গেছে যারা এদেরকে আশকারা দিয়ে বড় করছে।”

তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে অভিযান শুরু হয়েছে, ভালো। কিন্তু হাতের সামনে যে ডেভিলরা রয়ে গেছে তাদের ধরছেন না কেন? যে ডেভিলরা পরিষ্কার ভাষায় আজকে যারা সিন্ডিকেট করেছে, তারা আগস্ট মাসের ২ অথবা ৩ তারিখ তৎকালীন খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিল, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ চলবে না, আপনাকে আমরা চাই… কবিতার ভাষায় বলেছিল, জীবনেও চাই, মরণেও চাই, অনেক অসম্ভবের সঙ্গে আপনাকে চাই।”

‘‘সেই ডেভিলরা আপনার কাছে আছে… কেন ধরছেন না?”

‘কোনো একটা দলের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ফল’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আজ পত্রিকায় দেখলাম, নাম দিয়ে দিয়েছে… নাভিল গ্রুপ ১২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে… তাকে আপনারা গ্রেফতার করছেন না। কারণ কি?”

‘‘কোনো একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক আছে। সুতরাং তাকে ধরা যাবে না… তাই না?”

তিনি বলেন, ‘‘সবাই শুধু বিএনপির দোষ দেন… বিএনপি এটা, বিএনপি সেটা। আসলে বিএনপি যতটুকু সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, বিএনপির ছেলেরা যতটুকু ভালো থাকার, ভালো রাখার চেষ্টা করেছে, সেদিকে আপনারা কেন নজর দিচ্ছেন না?”

‘‘শুধু একটা ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন, বিএনপি চাঁদাবাজি করে, চাঁদাবাজি করে। আরে ভাই, চাঁদাবাজি করলে ধরছেন না কেন? জানেনই, যখন ধরেন কোনো আপত্তি নেই, সবাইকে ধরেন।”

‘ভণ্ড রাজনৈতিক দলের মুখোশ খুলে দিতে হবে’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আজকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন দুই-একটি রাজনৈতিক দল ও দুই-একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। যাদের একজন ওই সময়ে অত্যন্ত অশুভ মন্তব্য করেছিলেন…আরও একজন বলেছিলেন, আমৃত্যু তোমাকে চাই, মৃত্যুর পরেও চাই, পরকালেও তোমার সঙ্গে থাকব.. খেয়াল আছে কি? যদি কারো খেয়াল না থাকে, ২/৩ আগস্টের টেলিভিশনের খবরগুলো দয়া করে দেখেন, সবগুলো ডেভিল, সবগুলো শয়তানকে পেয়ে যাবেন, যাদের উস্কানিতে ৪/৫ তারিখে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি চালানো হয়েছিল, যাদের উস্কানিতে আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে চলেছে, যাদের উস্কানিতে আমার হাজার হাজার মা-বোনের বুক খালি হয়েছে… এদের কিছু হচ্ছে না।”

‘‘কারণ ওদের সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল, যারা বার বার আমাদেরকে দোষারোপ করে। আসলে নিজের দোষ ঢাকতে দিয়ে বিএনপি ওপরে দোষারোপ করছে। এখন থেকে আমাদের কাজ হবে ওই ধরনের ভণ্ড রাজনৈতিক দলগুলোকে, যারা কিনা লেবাস পরে অন্য দলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে, তাদেরকে জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেওয়া, তাদের প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা।”

দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ সালাউদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিব, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশীদ হারুন, ফরহাদ হোসেন, আবদুস সাত্তার, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান মিন্টু, শরীফ হোসেনসহ মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মারিয়া

×