ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

মিটারে যাত্রী বহনে নারাজ

সিএনজি অটোচালকদের সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিএনজি অটোচালকদের সড়ক অবরোধ

হয়রানির প্রতিবাদে সিএনজি চালকরা বৃহস্পতিবার রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন

সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করলে মামলা ও জরিমানার নির্দেশনায় নাখোশ হয়েছেন এসব পরিবহনের চালকরা। এজন্য তারা রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শতাধিক সিএনজি অটোরিক্সাচালক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে টেকনিক্যাল কলেজ মোড় অবরোধ করে রাখেন। ফলে ওই এলাকায়
আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। এই যানজট গড়ায় নগরীর বহুদূর পর্যন্ত। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরিবহন যাত্রী ও সাধারণ মানুষকে।   
পুলিশ বলছে, বাধ্যতামূলক মিটারে সিএনজি চলাচলের সিদ্ধান্ত না মানার ঘোষণা দিয়েছেন সিএনজিচালকরা।
সিএনজিচালকদের অভিযোগ, মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পথে পথে চাঁদাবাজি, স্ট্যান্ডের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায়সহ নানা কারণে তারা সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক অটোরিক্সা চালাতে পারেন না। অতি মুনাফালোভী মালিকদের জন্য তারা বাধ্য হয়ে মিটার ছাড়া সিএনজি চালান। কারণ, প্রতি শিফটে মালিককে জমা দিতে হয় ৯৫০ টাকা। আর রাতের শিফটে সকাল ৬টা অবধি চালালেও মালিককে দিতে হয় ৯০০ টাকা। ফলে, তাদের পক্ষে মিটারে সিএনজি চালিয়ে পরিবার নিয়ে রাজধানীতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, সিএনজিচালকরা মিটারের বাইরে গিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন। মিটারে যেখানে দুইশ’ টাকা ভাড়া আসার কথা, সেখানে তারা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হাঁকান। এমনকি বৃষ্টি বা বৈরী আবহাওয়ায় এই ভাড়া হাঁকানো সীমার বাইরে চলে যায়।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আযম জানান, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ১০০ থেকে ১০৫ জনের মতো সিএনজিচালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা বাধ্যতামূলকভাবে মিটারে যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিরোধিতা করে স্লোগান দেন। তবে ১০টা ৫ মিনিটের সময় তারা সড়ক ছেড়ে দেন।
সড়ক অবরোধের ফলে শ্যামলীসহ আশপাশের এলাকায় এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের ভয়াবহতা দুপুর পর্যন্ত গড়ায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।  
কলাবাগান এলাকায় যানজটে দীর্ঘ সময় আটকা পড়েন বাস যাত্রী সুমন। তিনি সাভার যাওয়ার উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকা থেকে বাসে ওঠেন। কলাবাগান যেতেই অনেক সময় লেগে যায়। এর পর সেখানে গাড়ি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পরে বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিল আর বলছিল, এমন একটা শহরে আমরা বসবাস করি। যেখানে আল্লাহ ৩০ দিনই কোনো না কোনো আন্দোলন চলতে থাকে। আর এর ভোগান্তি সহ্য করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
গাবতলী, মিরপুর থেকে আসা-যাওয়ার দুই পাশের গাড়ি যানজটে আটকা পড়তে দেখা যায়। ফলে কোনো কোনো যাত্রী বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। কেউ কেউ সিগন্যাল পার হয়ে অন্য গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। দুপুরের পর পর শাহবাগে শিক্ষকদের সড়ক অবরোধের ফলে এদিকে আরও ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবসে এমনেই সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। এর মধ্যেই কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করায় যানজটের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তাই এক প্রকারে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বৃহস্পতিবারের দিনটি পার করতে হয়েছে নগরবাসীকে।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিএনজি ও পেট্রোলচালিত অটোরিক্সাকে মিটারে যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। অন্যথায় চালকের বিরুদ্ধে মামলা এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা হলেও মালিকরা ১১০০-১২০০ টাকা নিচ্ছেন। আইনে শিফটিং পদ্ধতি না থাকলেও মালিকরা দুই-তিন শিফট চালিয়ে ১৬০০-১৮০০ টাকা আদায় করছেন। কোনো শ্রমিক আপত্তি জানালে চাবি রেখে দেওয়া বা চাকরি হারানো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

×