ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

আজ সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আজ সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু

.

অবশেষে সকল জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে তবলিগ জামাতের আলোচিত সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতিতে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে শূরায়ে নেজামের দুই ধাপে ৬ দিনব্যাপী ইজতেমা শেষে সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলো আজ থেকে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা।
সাদপন্থিদের অন্যতম মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা কোনো শর্তের আবদ্ধে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠান করছি না। অপরদিকে শূরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জনকণ্ঠকে বলেছেন, সাদপন্থিরা ইজতেমা ময়দানে আর কোনোদিন ইজতেমা করতে পারবে না এমন শর্ত জারি আছে। আয়োজকদের পক্ষে শীর্ষ মুরুব্বি ডক্টর রেজাউল করিম বলেন, আপাতত কোনো শর্ত নিয়ে ভাবছি না। আগে সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করি, ভবিষ্যতে আমরা সাদ অনুসারীরা বিশ্ব ইজতেমা করতে পারব কি পারব না, তা আল্লাহপাকই ফয়সালা করবেন।
আজ শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে উপমহাদেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জুমার নামাজে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্নে আয়োজন এই বিশ্ব ইজতেমার। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা ইয়াকুব সিলানী, তরজমায় ছিলেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ সাহেব। আজ শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেব। এদিকে সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠান উপলক্ষে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ডক্টর নাজমুল করিম খান টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দেশের বহু সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার এড়াতে তবলিগ জামাত ব্যবহার করতে পারে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসে এরা ইজতেমায় ভর করছে, এসব ডেভিলকে ধরিয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন ইজতেমার মুরুব্বিদের কাছে। ইজতেমা ময়দানে অপরিচিত কোনো লোকের সন্ধান পেলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করারও অনুরোধ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের কেন্দ্রীয় পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আয়োজিত সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগেরদিন সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন গাজীপুর পুলিশ কমিশনার। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমাও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
৫ টি সেক্টরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের ভেতর- বাইরে এবং চতুর্দিকে ৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদেশে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলমান থাকায় অনেক ডেভিলও ইজতেমা ময়দানে লুকিয়ে থাকতে পারে। সেসব ডেভিল থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয় প্রেস ব্রিফিংয়ে।
পুলিশ কমিশনার আর বলেন, আখেরি মোনাজাতের দিনও রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হবে না। গাড়ি চলতেই থাকবে। পাশাপাশি রাস্তায় কোনো লোক দাঁড়াবে না, চলতেই থাকবে। রাস্তার আশপাশে কোনো হকারও বসবে না। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার শূরায়ে নেজামের প্রথম পর্বের আয়োজন শেষে সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন উপলক্ষে মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার ডক্টর মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান আরও বলেন, সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আগের মতো সকল প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে।
কড়া নিরাপত্তায় যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের চাইতে আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকবে। বিশ্ব ইজতেমার পক্ষ থেকে তবলিগের কাজে নিয়োজিত প্রায় দশ হাজার স্বেচ্ছাসেবী পুলিশের সঙ্গে থেকে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, আপাত দৃষ্টিতে দেখা না গেলেও ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতরে সাদা পোশাকে কাজ করছে। বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে ময়দানে ক্যামেরা ড্রোন ওড়াতে গেলে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে। অন্য কোনো সংস্থা যেন ইজতেমা ময়দানে ড্রোন ওড়াতে না পারে এবং স্যাবোটাজ বন্ধে ড্রোন ওড়ানোয় পুলিশের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা এখনও বলবত আছে।
ডেভিল হান্ট অভিযান চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো দুষ্কৃতকারী যদি ইজতেমায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, কোনো ডেভিল যদি পান তাহলে ধরিয়ে  দেবেন। সাদপন্থিদের পক্ষে শীর্ষ মুরুব্বি ডক্টর রেজাউল করিম, রেজা আরিফ, সফিকুর রহমান, হাজী মনির ও মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকদের পক্ষে শীর্ষ মুরুব্বি ডক্টর রেজাউল করিম বলেন, সুন্দরভাবে ইজতেমা করতে দেওয়ায় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত কোনো শর্ত নিয়ে ভাবছি না। সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে টানা ৬ দিন শূরায়ে নেজামের (জোবায়েরপন্থি) ইজতেমা সম্পন্ন হয়। এখন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকে ইজতেমায় বয়ান শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সাদপন্থিদের তিনদিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব তথা বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইজতেমা ময়দান সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাদপন্থি তবলিগ অনুসারী মুসল্লিরা দলে দলে জামাতবদ্ধ হয়ে দেশের নানাস্থান থেকে ইজতেমা ময়দানে আসছেন। জামাতবন্দি মুসল্লিরা মাঠের নানা জায়গায় প্যান্ডেলের নিচে অবস্থান নিচ্ছেন। নিজের জানমাল খরচ করে তবলিগ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা করে থাকেন। তবলিগের ৬ উসুল নিয়ে বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর থেকে বয়ান শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত চলবে।
মুসল্লিদের নির্বিঘœ যাতায়াতে ডিএমপির নির্দেশনা ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান,  বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয় আখেরি মোনাজাতের দিন ভোর ৪টা থেকে রেডিসন ব্লু থেকে খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর হয়ে কামারপাড়া পর্যন্ত মহাসড়কটি যানবাহনের চালকদের পরিহার করে চলাচল করতে হবে; ওই দিন ভোর থেকে উত্তরার বাসিন্দা, বিমানযাত্রী, বিমান অপারেশনাল যানবাহন ও বিমান ক্রু বহনকারী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব যানবাহনের চালক বিমানবন্দর সড়ক (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক) পরিহার করে বিকল্প হিসেবে মহাখালী বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর-গাবতলী সড়ক ব্যবহার করবেন; আন্তঃজেলা বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও অন্যান্য ভারি যানবাহন আব্দুল্লাহপুর, ধউড় ব্রিজ মোড় পরিহার করে মহাখালী-বিজয় সরণি-গাবতলী হয়ে চলাচল করবে; অনুরূপভাবে নবীনগর, বাইপাইল ও আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গ হতে আগত যানবাহন কামারপাড়া/আব্দুল্লাহপুর ক্রসিং পরিহার করে সাভার, গাবতলী দিয়ে চলাচল করবে অথবা ধউড় ব্রিজ ক্রসিং হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে চলাচল করবে; ঢাকা থেকে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে আগত যানবাহনগুলো রেডিসন-ব্লু দিয়ে ইউটার্ন করে অথবা কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে প্রগতি সরণি হয়ে চলাচল করবে; আখেরি মোনাজাতের দিন ৩০০ ফিট দিয়ে আগত যানবাহন কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-২ (এয়ারপোর্টগামী) পরিহার করে প্রগতি সরণি এবং কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-৪ (কাকলী-মহাখালীগামী) ব্যবহার করবেন। কোনোভাবেই বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার করা যাবে না। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা/এয়ারপোর্টগামী এক্সিট পরিহার করতে হবে; ঢাকা মহানগর থেকে যেসব মুসল্লি হেঁটে বিশ্ব ইজতেমাস্থলে যাবেন, তাদের তুরাগ নদের ওপরে নির্মিত পন্টুন ব্রিজ অথবা কামাড়পাড়া ব্রিজ দিয়ে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে যাতায়াত করবেন; আখেরি মোনাজাতের দিন বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে আনা-নেওয়ার জন্য পদ্মা ইউলুপ হতে ট্রাফিক-উত্তরা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের জন্য পরিবহন (ফ্রি) সেবা প্রদান করা হবে। নির্ধারিত পার্কিং স্থানে মুসল্লিবাহী যানবাহন পার্কিংয়ের সময় অবশ্যই গাড়ির চালক/ হেলপার গাড়িতে অবস্থান করবেন এবং বহনকারী যাত্রীরা ও চালক একে-অপরের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখবেন, যাতে বিশেষ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ করা যায়। মুসল্লিবাহী প্রতিটি যানবাহনের দৃশ্যমান স্থানে চালকের নাম এবং মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান থাকতে হবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফ্লাইওভারের নিচে আব্দুল্লাহপুর বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে সব যানবাহন চালকদের আজমপুর থেকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকে হেঁটে ফ্লাইওভার দিয়ে পারাপার না হতে এবং খিলক্ষেত হতে আব্দুল্লাপুর হয়ে ধউড় ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে কোনো গাড়ি পার্কিং না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিভাগ অনুযায়ী যেসব নির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্কিং করতে হবে ॥ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যানবাহন কিছু স্থানে (বিভাগ অনুযায়ী) যথাযথভাবে পার্কিং করবেন- ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ পার্কিং করবে ১৫ নম্বর সেক্টর এলাকাধীন কদমতলী মার্কেট, ৫ নম্বর ব্রিজের ঢাল এবং ১৭ নম্বর সেক্টর উলুদাহ মাঠ। সিলেট ও খুলনা বিভাগ পার্কিং : উত্তরাস্থ ১৫ নম্বর সেক্টর লেকপাড় মাঠ। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ পার্কিং : ১০ নম্বর ব্রিজ এবং ১১ নম্বর ব্রিজ লেকের পশ্চিম পাশ, ১৬ নম্বর সেক্টরের ভেতরে এবং বউবাজার মাঠ। বরিশাল বিভাগ পার্কিং : ধউড় ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশন। ঢাকা মহানগরী পার্কিং : ৩০০ ফিট রাস্তা সংলগ্ন স্বদেশ প্রপার্টির খালি জায়গা।
ডাইভারশন পয়েন্টগুলো (শুধু আখেরি মোনাজাতের দিন অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা থেকে) ধউড় ব্রিজ, ১৮ নম্বর সেক্টর পঞ্চবটী ক্রসিং, পদ্মা ইউলুপ, ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড়।

×