![আবুল কাশেমের শেষ ঠাঁই হলো বাবার কবরের পাশে বরইগাছতলায় আবুল কাশেমের শেষ ঠাঁই হলো বাবার কবরের পাশে বরইগাছতলায়](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/2-2502131652.jpg)
.
আবুল কাশেমের শেষ ঠাঁই হয়েছে বাবার কবরের পাশে বরই গাছ তলায়। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর সর্বশেষ জানাজা শেষে তাকে মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ডবাজারের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার পারিবারক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার ধীরাশ্রমের দাক্ষিণখান এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে ঘটনাস্থলে যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র জনতা। এ সময় আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে।
তারা বেশ কয়েকজনকে আটক করে বেধড়ক মারধর করে ও কোপায়। এতে আবুল কাশেমসহ ১৭ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে ওই রাতেই গুরুতর আহত মো. কাশেম (১৮)সহ ৭ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর হয়। ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবরে রাতেই গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা। এতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠে গাজীপুর।
এদিকে বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে লাশবাহী একটি ফ্রিজিং গাড়িতে করে নিহত আবুল কাশেমের লাশ তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পিতা-মাতা হারানো প্রিয় আবুল কাশেমের লাশ দেখে স্বজনরাসহ বন্ধু ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী এবং স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় গাজীপুর শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে আবুল কাশেমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ব্যক্তিবর্গসহ শত শত লোক উপস্থিত ছিলেন। পরে তার লাশ নেওয়া হয় মহানগরীর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ডবাজারের আল-হেরা ফিলিং স্টেশন মাঠে। বাদ জোহর আরও একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ এ জানাজা শেষে তাকে দক্ষিণ কলেশ্বর এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের ডান পাশে বরই গাছ তলায় দাফন করা হয়।
ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও সদর মেট্রো থানা জামায়াতের আমির সালাহ উদ্দিন আইউবী, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মো. হোসেন আলী, সদর মেট্রো বিএনপির সভাপতি অ্যাড.
মেহেদী হাসান এলিস, টঙ্গী পশ্চিম থানার বিএনপির সভাপতি প্রভাষক বশির আহমেদ, জেলা হেফাজত ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী তৃণমূল মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম বিকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ইমতিয়াজ আহমেদ তানভীর ও জেলা শাখার সদস্য সচিব নাসেরও বক্তব্য রাখেন।
এদিকে জিএমপির সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, ৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বাদী হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২শ’ থেকে ৩শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত আবুল কাশেমের মৃত্যুতে আগের মামলার সঙ্গে নতুন করে এটি হত্যা মামলা সংযুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।