ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

ন্যূনতম দাম ও পরিমাণ বেঁধে দেবে সরকার

সুগন্ধি চাল রপ্তানি ফের উন্মুক্ত হচ্ছে

তপন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুগন্ধি চাল রপ্তানি ফের উন্মুক্ত হচ্ছে

আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার

আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ ছিল। তবে সুগন্ধি চালের আড়ালে সাধারণ চাল রপ্তানি ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিলেও পরিমাণ ও ন্যূনতম দাম বেঁধে দেবে সরকার। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ কমিটির সভায় সুগন্ধি চাল রপ্তানি উন্মুক্ত করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এখন সুগন্ধি চালের রপ্তানিমূল্য ও রপ্তানির পরিমাণ নির্ধারণে ১১ সদস্যের একটি নতুন কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সুগন্ধি চালের আড়ালে সাধারণ চাল রপ্তানি বন্ধের ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করবেন এবং প্রকৃত অর্থেই সুগন্ধি চাল রপ্তানির মাধ্যমে যাতে দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়, তা ঠিক করবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, শীঘ্রই বৈঠক করে চাল রপ্তানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হবে, তা ঠিক করা হবে। এ কমিটিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সদস্য আছেন।  খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ।

কমিটিতে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের প্রতিনিধিরা আছেন।
জানা যায়, এ কমিটি দেশে কী পরিমাণে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হচ্ছে, এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কত সেটি নির্ধারণ করবে। এর পর কী পরিমাণে চাল কত দামে বিদেশে রপ্তানি করা যায় তা উল্লেখ করে জমা দেবে প্রতিবেদন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাল রপ্তানির পরিমাণ ও ন্যূনতম দাম বেঁধে অনুমতি দেবে।
রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত করায় রপ্তানি ঝুড়িতে এ চাল তথা কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, প্রতি কেজি চাল সরকার যদি এক ডলার ৩০ থেকে এক ডলার ৪০ সেন্ট বেঁধে দেয়, তবে এক কেজি সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে তিন কেজি সাধারণ চাল আমদানি করা যাবে। দেশের  বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটবে, পাশাপাশি অন্য কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়বে। 
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, শীঘ্রই বৈঠক করে চাল রপ্তানির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হবে, তা ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু হয়। কিন্তু সুগন্ধি চালের আড়ালে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ চাল রপ্তানি শুরু হলে দেশে চাল সংকট দেখা দেয়। তখন অনুসন্ধানে সুগন্ধি চালের আড়ালে সাধারণ চাল রপ্তানির তথ্য উঠে আসে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ২০২২ সালে চাল রপ্তানি বন্ধ করে। এর পর মাঝে কিছু অনুমতি দিলেও ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রপ্তানি ফের বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে রপ্তানি শুরুর পর থেকে তথাকথিত ‘সুগন্ধি’ চাল বাংলাদেশী রপ্তানি ঝুড়িতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য হয়ে উঠেছিল। 
ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ বলেন, আমাদের রপ্তানির ঝুড়িতে সুগন্ধি চাল একটি জনপ্রিয় আইটেম। চাল না দিতে পারলে অনেক সময় অন্য পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যায়। যে কারণে মাঝখানে গত কয়েক বছর কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে। সুগন্ধি চালের কারণে অন্য নানান ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়াতে দেশের ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার।
বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ থাকার সময় আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে বলেছিলাম প্রয়োজনে ন্যূনতম দাম ও পরিমাণ বেঁধে দিন, তারপরও রপ্তানির সুযোগ থাক। কারণ এ দেশের একটি বড় পণ্য  চাল। বাংলাদেশী চালের প্রচুর চাহিদা বিদেশে রয়েছে, সুনাম রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি কেজি চাল সরকার যদি এক ডলার ৩০ থেকে ৪০ সেন্ট বেঁধে দেয়, তবে এক কেজি সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে তিন কেজি সাধারণ চাল আমদানি করা যাবে। দেশের  বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটবে, পাশাপাশি অন্য কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়বে।
বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি বন্ধ থাকার সময় অসাধু উপায়ে এ বাজার ভারত দখল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ কমিটির সভায় জানান, দেশের রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সুগন্ধি চাল ভারতে পাচার হচ্ছে।

কারণ উৎপাদন এলাকায় চালের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। সেসব চাল ভারত থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির নকল প্যাকেটে এতদিন রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় কিছু অসাধু রপ্তানিকারক এদেশ থেকে চাল নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করে বিদেশে রপ্তানি করছে।
এ দেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সুগন্ধি চালের উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশ থেকে প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৬ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ লাখ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ লাখ মার্কিন ডলারের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে গড়ে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয় ১৮-২০ লাখ টন। প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। অর্থাৎ উৎপাদনের তুলনায় চালের রপ্তানির হিস্যা অনেক কম। যে কারণে চাল রপ্তানিতে খাদ্যনিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই বলে বারবার দাবি করছেন রপ্তানিকারকরা।

আরো পড়ুন  

×