ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

পরিবর্তন করা হয়েছে আয়নাঘরের ভেতরের গঠন? যা জানালেন আমান আজমি

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পরিবর্তন করা হয়েছে আয়নাঘরের ভেতরের গঠন? যা জানালেন আমান আজমি

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বহুল আলোচিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এই পরিদর্শনে তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আমান আজমি, যিনি দীর্ঘ আট বছর আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এই ঘটনাকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, "বাংলাদেশ তো বটেই, সম্ভবত সমগ্র বিশ্বেই এটি নজিরবিহীন যে, একজন সরকারপ্রধান তার পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসনের শিকার একজন বন্দিকে সঙ্গে নিয়ে নির্যাতনস্থল পরিদর্শন করলেন। এটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়ার মতো এক বিরল ঘটনা।"

আমান আজমি জানান, দীর্ঘ আট বছর আয়নাঘরে বন্দি থাকার কারণে তিনি ওই স্থাপনার বিভিন্ন কক্ষ, ইন্টারোগেশন রুম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। আজকের পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী, আইন উপদেষ্টা, চারজন উপদেষ্টা, গুম কমিশনের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে আয়নাঘরের ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, "ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে কীভাবে একটি সরকারি বাহিনী অমানবিক ও নৃশংস নির্যাতন চালাতে পারে, তা দেখে সবাই মর্মাহত হয়েছেন। আমি আশা করি, এই পরিদর্শন ভবিষ্যতে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"

তবে আয়নাঘরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে আমান আজমি অভিযোগ করেন যে, পরিদর্শনের আগেই আয়নাঘরের অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে নির্যাতনের চিহ্ন বোঝা না যায়। তিনি বলেন, "দরজার গ্রীলের কপাট ও স্টিলের দরজা বদলে কাঠের দরজা লাগানো হয়েছে, জানালার গ্রীল সরিয়ে ফেলা হয়েছে, কালো রঙের আস্তর মুছে কাচ স্বচ্ছ করা হয়েছে, দেয়াল ভেঙে ভেন্টিলেটর বানানো হয়েছে, নির্যাতন কক্ষের আলামত মুছে ফেলা হয়েছে। এসব পরিবর্তন করা হয়েছে মূলত অপরাধীদের দোষ লঘু করে তাদের বাঁচানোর জন্য।"

তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "যারা এই পরিবর্তন এনেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক।"

এছাড়া, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন আমান আজমি। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান।

তার কথায়, "ন্যায়বিচার বিলম্বিত হওয়া মানে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা। আমাদের দীর্ঘদিনের দুঃসহ যন্ত্রণা লাঘব করতে হলে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।"

এম.কে.

×