ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে? যা জানাল জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ১৮:০১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে? যা জানাল জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সুসংগঠিত ও প্রাণঘাতী সহিংসতা চালিয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন, গত বছর ব্যাপক গণবিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১,৪০০ জন পর্যন্ত মানুষ নিহত হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানোর নীতিমালা গৃহীত হয়েছিল, যা রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশনায় এবং শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়।

১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর শেখ হাসিনা গত আগস্টে তার বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালানোর আগে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান।

প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে। পরে পুলিশের দমনপীড়নের জেরে তা দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপ নেয়, যার লক্ষ্য ছিল হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এটিই ছিল বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, তৎকালীন সরকার, এর নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল।"

জাতিসংঘের তদন্ত দল প্রতিবাদকারীদের কাছ থেকে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা, পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করে দেওয়া, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ১৩% ছিল শিশু।

টার্ক বলেন, "এটি ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাবেক সরকারের সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশল। আমাদের সংগ্রহ করা তথ্য ও প্রমাণ রাষ্ট্রীয় সহিংসতার ভয়াবহ রূপ তুলে ধরছে।"

তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ও শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন তৈরি করা হয় ২৩০ জনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ব্যক্তি ও অন্যান্য সূত্রের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। দলটি চিকিৎসা প্রতিবেদন, ছবি, ভিডিওসহ অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "সাবেক সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, আটক করে নির্যাতন চালায়।"

যদিও সহিংসতার বেশিরভাগ অংশের জন্য সরকারি বাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সাবেক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা এবং কিছু জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব ঘটনাও তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার দফতর।

সূত্র: বিবিসি (https://www.bbc.com/news/articles/cnvqle40183o)

এম.কে.

×