ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

জুলাই অভ্যুত্থান

শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ, আজই প্রতিবেদন প্রকাশ হবে

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ, আজই প্রতিবেদন প্রকাশ হবে

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন ও এর জেরে ঘটে যাওয়া সরকার পতনের সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল। বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রথম আলো-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন এই ঘটনার ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে, যেখানে শেখ হাসিনার সরকার ও তার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ধীরে ধীরে গণবিক্ষোভের রূপ নেয়। এই আন্দোলন সরকারের পতন ঘটিয়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান ঘটায়। গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান এবং তারপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভ দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক বলপ্রয়োগ করেছে। এতে নির্বিচারে গুলি চালানো, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণগ্রেফতার, নির্যাতন, বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক আটক রাখা এবং চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ তদন্ত দল চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরসহ আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে। সেখানে তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নেন। তদন্তের অংশ হিসেবে ২৩০ জনেরও বেশি মানুষের বক্তব্য নেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬ জন ছিলেন বর্তমান ও সাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিশেষভাবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেল (এনটিএমসি), গোয়েন্দা ব্যুরো (ডিবি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতো সংস্থাগুলোর।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় সরকারের ওপর
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফর করেন। তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্দোলন দমনের নামে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতারা পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে স্বাভাবিক প্রতিবাদগুলোও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। এতে সরাসরি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর ভূমিকার কথাও বলা হয়েছে, যারা বিক্ষোভকারীদের দমন করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে আজ জেনেভায় প্রকাশিত হবে, যেখানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1AJ6ucYeoY/

মারিয়া

×