![বাংলাদেশে দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটেছে বাংলাদেশে দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটেছে](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/b4-2502111746.jpg)
ধানমণ্ডি মাইডাস সেন্টারে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান
বাংলাদেশের দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটেছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ১৫১তম। গত বছর এ সূচকে বাংলাদেশ ১৪৯তম অবস্থানে ছিল। অপরদিকে, সর্বনি¤œ স্কোর পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। অর্থাৎ বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪’-এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-িতে টিআইবি কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০ থেকে ১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়।
টিআই বলেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩, যা গতবারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম। গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪।
এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১২ সালের পর এবার দুর্নীতি সূচকে সবচেয়ে কম স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের স্কোর কমেছে। তিনি বলেন, টিআইবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। আর এ বছর স্কোর ও উচ্চক্রম অনুযায়ী অবস্থানের অবনমন হয়ে প্রমাণ করে যে, বিগত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে।
এর প্রভাবে যথেচ্ছ লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রম অবনতি হয়েছে। অথচ দুর্নীতিবিরোধী বাগাড়ম্বর ব্যতীত এ নিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের কোনো বিকার বা চিন্তা দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তদুপরি দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর যথারীতি বিব্রতকরভাবে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনি¤œ।’ তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সৃষ্ট সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। আওয়ামী লীগ আমলে সরকারি প্রকল্পে কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। অথচ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। অর্থাৎ স্কোর বিবেচনায় বাংলাদেশের নি¤œমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ সালে থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০-এর স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘২৫ থেকে ২৮’-এর মধ্যে আবর্তিত হয়েছে। ২০২৩ সালে স্কোর এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪-এ আরও এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে।
২০১২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে সিপিআই স্কোরের প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৩ বছরের গড় স্কোর ২৬-এর তুলনায় প্রায় তিন পয়েন্ট কম এবং এই মেয়াদে সর্বনি¤œ। এর মধ্যে টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৪, ২৭ ও ২৮।
নি¤œক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, তিনবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম।
সিপিআইয়ে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েছে ডেনমার্ক। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদান। দুর্নীতির ধারণা সূচকের (সিপিআই) ১০০ স্কোরের মধ্যে দেশটি পেয়েছে মাত্র ৮। তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া। আর তৃতীয় ভেনিজুয়েলা। তাদের স্কোর যথাক্রমে ৯ ও ১০।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সমান ১৫১ স্কোর নিয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।