![ডিসেম্বরে ভোট ধরে প্রস্তুতি চলছে ডিসেম্বরে ভোট ধরে প্রস্তুতি চলছে](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/f3-2502111657.jpg)
নির্বাচন কমিশনে ১৮ দেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ
চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোট ধরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার দুপুরে ইউএনডিপিসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কমিশনার আবুল ফজুল মো. সানাউল্লাহ এ কথা জানান।
এখন জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই বলেও তিনি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সহযোগিতা করছি। আশা করছি বাংলাদেশে এবার ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হবে।
এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গত বছর ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয় আর সেখানেই যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে এ বছরের শেষ নাগাদ ডিসেম্বরে নির্বাচন। আর যদি আরেকটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন করা সম্ভব।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, আমরা বলেছিলাম আমাদের আর্লিয়েস্ট ডেট ধরে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন কোনো প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি, সেটি হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার বিষয়ে সরকারের অনুরোধ এলে ইসির পক্ষে তা সম্ভব কি না এ প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, সরকার অনুরোধ করলে ইসি বিবেচনা করতে পারে। তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পাঁচস্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলে এক বছরের মতো সময় লাগে।
আমাদের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়নি, কিছু হয়েছে। এ কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে স্পেসিফিক টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন জাতীয় নির্বাচন কোনো একটা টাইম ফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব কি? এমন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, স্থানীয় ও জাতীয় দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। অতীতে আমরা দেখেছি স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে এক বছর সময় লাগে। তাই স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। তাই ইসি জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভাবছে।
আরেক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত হয় এমন কিছুর বিষয়ে কমিশন সজাগ রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কখন কতটুকু হবে, কোনো কোনো ইনস্টিটিউশনে হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারব। এটা জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত করবে কি করবে না। জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত হয় এমন কিছুর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সজাগ থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বৈঠকে প্রথমেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন নিয়ে আমরা কি করছি তা তুলে ধরেছেন। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা ঐতিহাসিকভাবে যে সহযোগিতা করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ কোন স্টেজে আছি সে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপি কি পরিকল্পনা করছে সহায়তা দেওয়ার জন্য তা জানিয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগিতায় কি ধরনের সহায়তা করতে পারেন সে ধারণাও দিয়েছেন। আর নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তাই আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না, যা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, জাপান, জার্মানি, চীন, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও তুরস্কসহ ১৮ দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। সম্প্রতি একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। সেই ইঙ্গিত আরও জোরালো হয় সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের পর।
সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম জানান, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের আপত্তি নেই।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, গত ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কি ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া যায় সেজন্য ইউএন-এর একটি প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন দল দুই সপ্তাহ সফর করে জানুয়ারিতে।
তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথামিক কিছু আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে ভোটারদের অংশগ্রহণের জন্য ইসিকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালীকরণ যেমন ভোটার নিবন্ধন, ভোটার নিবন্ধন প্রচার, ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্টেফান লিলার বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি, আশা করছি এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আমাদের এ নিয়ে কিছু করার নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি-না? এ প্রশ্নে স্টেফান লিলার বলেন, এটা নিয়ে মন্তব্য করা আমার বিষয় না।