![বাংলাদেশে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান! বাংলাদেশে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান!](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/befunky_2025-1-2_17-27-9-2502111202.jpg)
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সম্প্রতি তাদের সামরিক সম্পর্ক আরো গভীর করেছে, যা ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত কয়েক মাসে, দুই দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা বৈঠক ও গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে, যা তাদের ঐতিহাসিক উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের গরমিল তৈরি করেছে।
এটি ঘটছে এমন একটি সময়ে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন আসছে, এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিদেশনীতি পুনরায় সমন্বয় করছে।
গত মাসে, বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ’র সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডিতে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকটি এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের সামরিক সাক্ষাৎ ছিল।
এর আগে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান একটি সামরিক প্রতিনিধি দল নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি সফর করেন এবং পাকিস্তানের সেনা, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশও পাকিস্তানে আয়োজিত একটি বহুজাতিক নৌ-বাহিনীর মহড়া অংশগ্রহণ করছে, যেখানে চীনও একটি বড় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে, যা চীনের প্রভাবের উপস্থিতি জানাচ্ছে।
এছাড়া, পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তারা শীঘ্রই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-এর কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সফরগুলি দুটি দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা হাসিনার শাসনামলে ছিল না।
ISI’র উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ: পাকিস্তানের ISI সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। প্রায় দুই দশক পর, ISI-এর বিশ্লেষণ শাখার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শহিদ আমির আফসার বাংলাদেশ সফর করেন, যা দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।
এই একের পর এক উচ্চপর্যায়ের সফর ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এই উন্নয়নগুলির উপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চীনের ভূমিকা
চীন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ তার সামরিক সরঞ্জামের ৭২ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করে, যা চীনের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে। চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পুনর্গঠন: এছাড়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও বেড়েছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনুস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে কায়রোয় এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে সাক্ষাৎ করেছেন।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সহজ করেছে এবং ১৯৭১ সালের পর আবারও সরাসরি সামুদ্রিক যোগাযোগ চালুর সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে।
ভারতের জন্য কৌশলগত প্রভাব
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের শক্তিশালী হওয়া ভারতের জন্য গুরুতর কৌশলগত পরিণতি বয়ে আনতে পারে, বিশেষ করে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের জন্য। ISI-এর বাংলাদেশে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভারতের জন্য উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ অতীতে এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছিল।
ভারত এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। সীমানা রক্ষী বাহিনী (BSF) উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, বিশেষত সিলিগুড়ি করিডোরে, যা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
এভাবে, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের নতুন দিক ভারতের নিরাপত্তার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
মারিয়া