![ছাত্র আন্দোলনে গুলি করা সাড়ে সাত শতাধিক পুলিশ চিহ্নিত ছাত্র আন্দোলনে গুলি করা সাড়ে সাত শতাধিক পুলিশ চিহ্নিত](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/f4-2502101740.jpg)
গুলি করা সাড়ে সাত শতাধিক পুলিশ চিহ্নিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গুলিবর্ষণ করে হতাহত করার ঘটনায় যেসব পুলিশ সদস্য দায়ী তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তে ইতোমধ্যে সাড়ে সাত শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা করার জন্য তদন্ত চলমান আছে। খসড়া তালিকাটি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় ধারণকৃত স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ ‘আন্দোলনের ছবি’ ওয়েবসাইটে আপলোডের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তপূর্বক দায়ী পুলিশের যে খসড়া তালিকা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম।
তিনি জানিয়েছেন, ওসি মুজিবুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ২ আগস্ট ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মুজিবুর রহমানকে বদলি করা হয়। নতুন ওসি হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলমকে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি, গ্রেপ্তারে জড়িত ছিলেন উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মুজিবুর রহমান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও তিন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল রাজশাহী জেলা পুলিশের সহায়তায় সারদার পুলিশ একাডেমি থেকে মোল্যা নজরুল ইসলামকে আটক করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মোল্যা নজরুল ইসলামকে সিআইডিতে বদলি করা হয়েছিল। পরে তাকে রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করে। পরে দুপুরে তাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাতকেও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার সময়ে পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেছে। পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। গুলিবর্ষণের সময়ে প্রচলিত নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুলি করার নির্দেশদাতা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আহ্বান করেছিল। ১৮ থেকে ২১ জুলাই এই চারদিনে দেশে সবচেয়ে বেশি গুলি চলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশের ৩৫৭ সদস্য এ সময় প্রায় আট হাজার প্রাণঘাতী গুলি করেন। এতে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত এবং কয়েকশ আহত হন বলে তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। তবে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে। চূড়ান্ত তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি, দায়ী পুলিশ সদস্য চিহ্নিতকরণের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়া যাবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক ভূমিকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা বা সদস্যদের শনাক্তে কাজ চলছে। এটা করতেই হবে। পুলিশ বাহিনীর জন্যই করতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছিল। তোপের মুখে পড়ার কারণ ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান।
ছাত্র-জনতার বিপক্ষে কতজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য জড়িত ছিল? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি নাÑ জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এটা বলা সত্যিই এই মুহূর্তে কঠিন, তদন্তসাপেক্ষ। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে অনেক মামলা হয়েছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে নির্দোষ কিন্তু আসামি হয়েছেন। আবার অনেকে দোষী কিন্তু শনাক্ত হয়নি বলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আইজিপি বলেন, দুই লাখ ১৩ হাজার পুলিশের কতজন বিপক্ষে ছিল তা খুঁজে বের করা সত্যিই কঠিন। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দোষী বা জড়িত বলা যাবে না, যতক্ষণ তদন্তে প্রমাণ না হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যেসব পুলিশ সদস্য অতি বলপ্রয়োগ করেছেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হলে তখন জানা যাবে প্রকৃতপক্ষে কতজন পুলিশ সদস্য গুলিবর্ষণ করেছে এবং হতাহতের জন্য দায়ীদের। তবে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তের পর্যায়ে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে যাতে অনেক পুলিশ সদস্যের নাম চলে এসেছে।
অতি বলপ্রয়োগকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা অনেক পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১১৫টি মামলা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে ইতোমধ্যে পুলিশের দুই কর্মকর্তা ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার জসীম উদ্দিন মোল্লা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ‘লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে আইনজীবীদের একটি সংগঠন পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১০০টির এজাহার পর্যালোচনা করেছে। সংগঠনটির পর্যালোচনার একটি প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে দিয়েছে।
সেখানেই ১৮ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত এই চারদিনে প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়েছে। এই চারদিনের বাইরেও পুলিশের গুলিবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে যা তদন্তাধীন আছে।
লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অন্যতম সংগঠক আব্দুল্লাহ আবু নোমান গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, গত ১৮-২১ জুলাইয়ের ঘটনায় পুলিশের করা মামলাগুলোর এজাহারে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের নাম ও গুলির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছিল অজ্ঞাতনামা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। মামলাগুলোতে তখন বেশকিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।
অন্তর্র্বর্তী সরকার সেই মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাতশ পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কনস্টেবল ৪৬৭ জন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ১০৬, উপপরিদর্শক (এসআই) ১৫৭, পরিদর্শক দুইজন এবং এএসপি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। বাকি ১৪ জন পুলিশের নায়েব, সুবেদার ও চালক রয়েছে বলে জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে গত ১৮-২১ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের ১২টি থানা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ১০টি থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নির্বিচার গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ প্রাণঘাতী গুলি, রাবার বুলেটসহ অন্তত ২৬ হাজার ২৩টি গুলি ছোড়ে।
এর মধ্যে শটগানের সিসা কার্তুজ ১২ হাজার ৩৪০টি, চীনের সেভেন পয়েন্ট সিক্সটু এমএম, এসএমজি, টরাস নাইন এমএম ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি চার হাজার ৩১৬টি, পিস্তলের গুলি ২৫৬টি, আট হাজার ৯৯৪টি রাবার বুলেট, ১৬টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৯৮৪টি সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্রেনেড, মাল্টি ইম্প্যাক্ট, কাইনেটিভ ও ভারি বল কার্তুজ রয়েছে। এসব ছুড়েছেন ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাতশ সদস্য। এর মধ্যে প্রাণঘাতী গুলি ছিল ১৬ হাজার ৯১২টি।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সূত্র জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার ক্ষেত্রে শটগান, পিস্তল ও চাইনিজ রাইফেলের ব্যবহার বেশি হয়েছে। কোথাও কোথাও এসএমজি (সাব মেশিনগান) ও এলএমজির (লাইট মেশিনগান) মতো অস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছে। এসব অস্ত্র বাংলাদেশ পুলিশ ব্যবহার করে। এই চারদিনে নিহত ১২০ জনের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির চিহ্ন ছিল।
তাদের অনেকে ‘এইম ফায়ার’ বা লক্ষ্যবস্তু করে গুলির শিকার হয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কিছু নিউজ আউটলেট এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা ও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকৃত তালিকা এখানে দেওয়া হলো। পুলিশ সদর দপ্তর এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, পুলিশ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হন তাদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। যদি কেউ দাবি করেন, গণঅভ্যুত্থানে এই তালিকার বাইরেও পুলিশ নিহতের ঘটনা ঘটেছে, সেক্ষেত্রে প্রমাণ সরবরাহের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বা হচ্ছে তাদের অনেকেই দাবি করেছেন, থানা পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে, আত্মরক্ষার্থে গুলি করা হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে গুলি করা পুলিশের কাজ নয়। কোনো পুলিশ সদস্য চাইলেই গুলি করতে পারেন না। ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট মহল থেকে নির্দেশনা না দিলে গুলি করা যায় না।
ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট মহলের নির্দেশনা না মানলে চাকরি থাকে না। তাহলে মাঠের পুলিশ সদস্যদের করণীয় কী ছিল? দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চেইন অব কমান্ডের অধীনে আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনে যাবতীয় কর্মকা- করতে হয় বা হচ্ছে যা স্বীকৃত। পুলিশ প্রবিধানের ১৫৩ ধারা অনুযায়ী, তিন ক্ষেত্রে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এগুলো হলো ব্যক্তির আত্মরক্ষা ও সম্পদ রক্ষার অধিকার প্রয়োগ, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা ও গ্রেপ্তার কার্যকর করার জন্য।
এ ছাড়া দ-বিধির ১০২ ধারা অনুযায়ী, যখনই ক্ষতির আশঙ্কা শেষ হবে, তখন আত্মরক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগের অধিকারও শেষ হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম যথাযথভাবে মানা হয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, পুলিশ কোনোভাবেই প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে পারে না। পুলিশ যে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। নিশ্চয়ই তদন্ত সংস্থা বিষয়গুলো আমলে আনবে এবং ট্রাইব্যুনাল বিচার নিশ্চিত করবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় ধারণকৃত স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ ‘আন্দোলনের ছবি’ ওয়েবসাইটে আপলোডের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
তিনি বলেছেন, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় ধারণকৃত স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ ‘আন্দোলনের ছবি’ ওয়েবসাইটে আপলোড করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই ওয়েবসাইটে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ আপলোড করা যাবে।