ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক ॥ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ

দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা একটি বক্তব্য রাখবেন বলে ধারণা দিয়েছেন। তাই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা অতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন সেটাই আশা করি। 
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনুষ্ঠানের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ বৈঠকে যারা ছিলেন, তারা অতি দ্রুত একটি নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি এবং জনগণও প্রত্যাশা করছে। 
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় বিএনপি মহাসচিবসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের গাড়ি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রবেশ করে। বিএনপির প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি  নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন খুব সহজ হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে একমত হব না। আগেও বলেছি এখনো বলছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নয়।’
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে কিছু জানাতে পারে বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। আরও বলেছি যে, এটা অন্তর্বর্তী সরকার।

সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের আবারও তাগাদা দিয়েছি। ন্যূনতম যে সংস্কার  সেটা যেন করে। ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছরে যে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করার ব্যাপারে আমরা বলেছি। তারা একমত হয়েছেন। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছি। আমরা বলেছি অপারেশন ডেভিল হান্ট অপারেশনে যেন আগের কিছু পুনরাবৃত্তি না হয়, নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, আমরা জোরের সঙ্গে বলেছি’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বরেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সার্বিক বিষয়ে দলের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি সেই দায়িত্ব পালন করেছে।
তিনি বলেন, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আমরা যেটা বারবার বলে এসেছি, এ সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। তাই দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের আবারও তাগাদা দিয়েছি। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। এ সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারা কাজ করছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি এসেছে। বিএনপি বলেছে, বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’ যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হব না। আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলেছি।’
প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন, অস্বাভাবিক দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি রোধ করুন, দ্রুত নির্বাচনী রোড ম্যাপ প্রদান করুন, প্রশাসনের সর্বস্তরে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্ত করুন। আপনার এবং আপনার সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে লিখিতভাবে যা জানিয়েছে বিএনপি ॥ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে বলা বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য-মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলে অতি সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে, এবং প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের সহায়তায় দেশের বাইরে থেকে হাসিনা এই তৎপরতা চালিয়েই যাবেন। সুতরাং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা দরকার।  
চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে পারেনি। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকা-ে উৎসাহিত হচ্ছে।

একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিরাজমান অস্থিতিশীল রাষ্ট্র পরিস্থিতি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিনিয়োগ-বাণিজ্যে স্থবিরতা ও বাজার সরবরাহ ব্যবস্থায় নৈরাজ্যপনা ইত্যাদি সীমাহীন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে মব কালচারের মাধ্যমে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্যণীয়, যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফলশ্রুতিতে গণঅভ্যুত্থানের জনআকাক্সক্ষা ¤্রয়িমান হতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের সার্বিক আকাক্সক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সার্বিক গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করণ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে জন-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।   
বিএনপি বলেছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের পতন হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বিজয়ী হয়েছে এবং সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে জনগণের বিপুল সমর্থন ও প্রত্যাশার ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও ছয় মাস পার করেছে। কিন্তু জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে, তা একটি বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার মুন্সিয়ানা দেখাতে পারছে না।

ফলে জনগণের আশা-ভরসা, প্রত্যাশা দ্রুত ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে বিএনপি বলেছে, নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। কেননা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী দেশসহ বিশে^র অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চুক্তি করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। তাদের সঙ্গে কোনো দেশ, সংস্থা কোনো প্রকার সহযোগিতা চুক্তিতে আসতে আস্থা পায় না। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেশ পিছিয়ে পড়ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিবাদ উত্তর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে নানা প্রস্তাব আর মতামত উঠে এসেছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে, যার মূল ভিত্তিটা রচনা করেছে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের অনেক আগে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই।

কিন্তু গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহের অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গৃহীত এবং বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনী ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম।
বিএনপি বলেছে, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট।

এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে, নির্বাচনমুখী অতি আবশ্যকীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যে নির্বাচিত সরকার সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নের নিশ্চিয়তা দিতে সক্ষম হবে। 
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘চার্টার অব রিফর্মস’ তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তী সময়ে যা বাস্তবায়ন করবে। তাই, আমরা অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে।  
বিএনপি বলেছে, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এই দেশ এবং দেশের মানুষের মূল চালিকাশক্তি, এই ঐক্যকে বজায় রেখে এই দেশ এগিয়ে নিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের চর্চাকে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে। আমরা এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না যাতে করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এবং গণঐক্য বিনষ্ট হয় অথবা ঐক্যে ফাটল ধরে।

সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। সম্ভাব্য বিপর্যয়রোধে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা কার্যকর করার আহ্বান জানাচ্ছি। অতিসম্প্রতি বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত ও অকাল অবসরপ্রাপ্ত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে, প্রয়োজনে তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পদে পদায়ন করা যেতে পারে।
বিএনপির পক্ষ থেকে সংশয় প্রকাশ করে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে মর্মে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্যে মোটেই সুখকর নয়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যে কোন দলের আত্মপ্রকাশকে আমরা স্বাগত জানাব।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে বলা হয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ে যুক্ত দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারী সরকার যে সব মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রারি করেছে তা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ বিধায় ক্ষতি ও হয়রানির শিকার নিরপরাধ মানুষদের আশ^স্ত করার জন্য আমরা সরকারকে সকল মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে মর্মে একটা ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান পুনঃর্ব্যক্ত করছি।

×