ছবিঃ সংগৃহীত
৫ আগস্ট ২০২৪ এ সরকার পতনের দিন এয়ারপোর্ট এরিয়ায় কীভাবে র্যাব হেডকোয়ার্টার সাহায্য করেছিলো সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। শাফিন আহমেদ নামের ফেসবুক আইডির এই পোস্টে বলা হয়, গুঞ্জন ওঠে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে উঠবেন। খবরটি বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা কুর্মিটোলা রোড, এয়ারপোর্ট, খিলগাঁও থেকে একদম উত্তরা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। এসময় এয়ারপোর্ট এরিয়ায় জনতার উপর মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ, এপিবিএন। ছত্রভঙ্গ হয়ে ছাত্র জনতা দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুনঃ https://www.facebook.com/share/v/19uojGbxfe/
এয়ারপোর্টের ৯ নম্বর গেটে অবস্থিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর স্থায়ী ব্যারাক থেকে এপিবিএন সদস্যরা বের হয়ে ধাওয়া দিলে ছাত্র জনতা ৮ নম্বর গেটে র্যাব হেডকোয়ার্টারের দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। মাঝখানে পড়ে যাওয়া জনতার একদিকে র্যাব, আরেকদিকে এপিবিএন, অন্যদিকে রাস্তায় পুলিশ। এমতবস্থায় তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
এসময় একজন র্যাব কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় ছাত্র জনতাকে অভয় দিয়ে তাদেরকে কনভিন্স করে র্যাব হেডকোয়ার্টারের দিকে নিয়ে আসার জন্য।
নির্দেশ মোতাবেক ওই কর্মকর্তা অসংখ্য ছাত্র জনতাকে পুলিশের লাইভ এমিউনিশনের হাত থেকে বাঁচিয়ে হেডকোয়ার্টারের দিকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপর ভীত, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জনতার জন্য শুকনো খাবার হিসেবে এক প্যাকেট বিস্কিট, একটি মিষ্টি এবং একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল দেওয়া হয়। ভিডিওতে আপনারা দেখতে পাবেন, আইল্যান্ডের উপর বসে সবাই খাবার খাচ্ছেন। অতঃপর তাদের সবাইকেই সেফ এক্সিট দেওয়া হয়।
সেদিন র্যাব এর উক্ত কর্মকর্তারা ব্যাকফায়ার করলে বা নিউট্রাল পজিশন নিলেও মিনিমাম ৪০-৫০ জন স্পট ডেড হয়ে যেত। কিন্তু র্যাব এর ওই ইউনিট সরাসরি ছাত্র জনতাকে সাহায্য করেন।
এখন প্রশ্ন হলো, র্যাব কে আমরা হেলিকপ্টারে করে ফায়ার করতে দেখেছি। তাহলে তাদেরই অফিসাররা কেনো এয়ারপোর্টে ছাত্র জনতাকে সেফ এক্সিট দিলো?
মূলত আন্দোলনের শুরু থেকেই র্যাব হেডকোয়ার্টার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রূপ সরাসরি ছাত্র জনতার পক্ষে অবস্থান না নিলেও ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে অপারগতা জানায়; অন্য একটি গ্রূপ সরাসরি রুলিং গভর্মেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র জনতার উপর ম্যাসা কার চালায়।
ছাত্রদের আন্দোলন যখন একরকম নিশ্চিত বার্তা দেয় যে আওয়ামীলীগ আর থাকছে না, তখন র্যাব এর ওই ইউনিট সরাসরি ছাত্র জনতার পক্ষ অবলম্বন করে এবং যে গ্রূপটি ছাত্র হত্যায় মেতে উঠেছিল, তাদের বিপক্ষে ছাত্রদের টেকনিক্যালি সাহায্য করে।
ভিডিওতে র্যাব এর এমন একজন অফিসার (এডিসি) আছেন, যিনি র্যাব এর আওয়ামীপন্থী অফিসারদের ব্যাপারে ছাত্রদের সফিস্টিকেটেড ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করেছেন। প্রটেস্টরদের জন্য ম্যাপ তৈরি, লাইভ এমিউনিশনের এগেইনস্টে টেক্টিক্যাল মুভ কেমন হওয়া উচিত এসব তথ্য উপাত্ত দিয়েও সাহায্য করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন “যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যা করল, আর যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে বাঁচিয়ে দিল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল” (সুরা মায়েদাহ, আয়াত : ৩২)
একটা বাহিনীর সবাই ভাল বা সবাই মন্দ হয়না। ভাল মন্দ মিলিয়েই হয়। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলনে যে অফিসার একজন নিরপরাধ মানুষের সাহায্যার্থে ছোট্ট একটি তথ্য দিয়েও সহায়তা করেছে, আমরা তাদেরকে আন্দোলনের স্টেকহোল্ডার মনে করি। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
বি.দ্র: ভিডিওটি কনফিডেন্সিয়াল হওয়ার দরুন সব অফিসারের ফেস ব্ল্যার করে দেওয়া হয়েছে এবং বিগত সাত মাসে এই ভিডিওটি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষই আজ প্রথম প্রকাশ করা হলো।
৫ ঘণ্টা আগে আপলোড করা এই ভিডিওটি এর মধ্যেই ১ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন ও ৯০০+ শেয়ার হয়েছে ভিডিওটি।
রিফাত