ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১

ভারতের দেওয়া কি সেই তিনটি শর্ত যা অগ্রাহ্য করেছে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৮:২০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারতের দেওয়া কি সেই তিনটি শর্ত যা অগ্রাহ্য করেছে বাংলাদেশ?

ঢাকার আকাশে তখন গোধূলির ছায়া,শহরের আলো ঝলমলে রাজপথে কূটনৈতিক এলাকার নিস্তব্ধতা যেন চাপা উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। প্রেসিডেন্সি ভবনের সামনে একের পর এক গাড়ি থামছিল, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের।এক অদৃশ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তখন ঢাকা, আর একইসঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে ইসলামাবাদেও। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছিল গোপন বৈঠক। 
এই ধরনের বৈঠক হয়তো অনেকের কাছে সাধারণ কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমের ভাষ্য একেবারেই ভিন্ন।
ভারতীয় গণমাধ্যম সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে-কেন ঢাকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এত দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে? কেন বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পাকিস্তান সফর করছেন, আর পাল্টা সফরে ইসলামাবাদের প্রতিনিধিরাও ঢাকায় আসছেন? এসব প্রশ্নের পেছনে যে গভীর রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে, তা এখন আর গোপন নেই।

একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে, যেখানে জানা যাচ্ছে মাত্র এক মাস আগেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং একটি গোপন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবিমতে, তিনি ঢাকা সরকারকে কঠোর তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের জন্য ছিল এক ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।

 ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ কার্যত এই শর্তগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এই প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির অস্বস্তি আরও বেড়েছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নয়াদিল্লির জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির আলোকে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান কতটা শক্তিশালী, আর বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতিতে কতটা স্বাধীনতা প্রদর্শন করছে এই- প্রশ্নগুলো এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আলোচনায় উঠে এসেছে।


ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বিক্রম মিশ্রের ঢাকা সফরের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের ওপর তিনটি নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা। প্রথমত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়। তৃতীয়ত, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে সরকার যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

কিন্তু বাংলাদেশ এই শর্তগুলো মেনে নিতে রাজি হয়নি। বরং, পাল্টা বার্তা হিসেবে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে হাঁটছে, যা ভারতের জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক সংকেত।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ ভারতের প্রতি সরাসরি বার্তা যে, ঢাকা কোনো একক শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতোমধ্যেই ঘনিষ্ঠ হয়েছে, আর পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন করে রাজনৈতিক ও সামরিক সংযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ এতদিন বাংলাদেশের ওপর তাদের যে একক প্রভাব ছিল, তা এখন ভিন্নমুখী হচ্ছে।


ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একাধিক বিকল্প সামনে রেখে পররাষ্ট্রনীতি সাজাচ্ছে। একদিকে তারা চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক মজবুত করছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে পুরনো বৈরিতা ভুলে নতুন দিগন্ত খুলছে।


ভারতীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দিল্লির জন্য সহজ নয়। কারণ, এতদিন ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে ভারতের ব্যাপক প্রভাব থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তা কমতে শুরু করেছে। 
বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করবে? ভারত কি তাদের কৌশল বদলাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আগামী কয়েক মাসের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে। তবে আপাতত এটা স্পষ্ট-ঢাকা তার পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা নিচ্ছে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।


সূত্র:https://tinyurl.com/5tt95exf

আফরোজা

×