ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

অসুবিধার পাল্লা ভারি হওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

দেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তপন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ০১:১০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দেশকে চার প্রদেশে ভাগ  করার সুপারিশ নিয়ে  মিশ্র প্রতিক্রিয়া

.

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবটি হলো, দেশের চারটি পুরানো প্রশাসনিক বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনাকে চারটি আলাদা প্রদেশে ভাগ করা। কমিশনের মতে, এই বিকেন্দ্রীকরণ স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের সাধারণ জনগণ প্রশাসনিক স্তরে কতটা সুবিধা বাড়বে, আবার কতটা বা অসুবিধা হবেÑ তা নিয়ে সর্বত্রই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধার পাল্লা অনেক ভারি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি লিখেছেন, এই চার প্রদেশ, অন্তত চারশত সমস্যার সৃষ্টি করবে।

বর্তমানে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো বেশ কেন্দ্রীভূত। এতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সমস্যাগুলোর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। প্রদেশ গঠন হলে, সরকারের দায়িত্ব অনেকটা স্থানীয় পর্যায়ে চলে আসবে। ফলে, সরকারের কাজ আরও জনগণের কাছে পৌঁছাবে এবং কার্যক্রমের গতিও বাড়বে। নাগরিকদের কাছে সরকারের সেবা দ্রুত পৌঁছাবে, যা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক  নঈম সুলতান বলেন, আমাদের দেশের আয়তনের জন্য এটি যুক্তিযুক্ত নয়। এতে করে বৈষম্য আরও বাড়বে। এছাড়া আমলাতন্ত্র আমাদের ওপর চেপে বসবে।

বর্তমানে কিছু অঞ্চলে সরকারি উন্নয়ন তেমনভাবে পৌঁছায় না। প্রদেশ গঠন হলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট সম্পদের বণ্টন আরও কার্যকরী হতে পারে। এর ফলে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ভূগোলগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে সরকার স্থানীয়ভাবে আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যেমন, কৃষি, শিল্প, পরিবহন বা শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রদেশের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রদেশ গঠন অনেক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে, তবুও এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে এটি একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করবে, যার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। অনেকেই মনে করেন, প্রদেশ গঠন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- প্রশাসনিক অস্থিরতা, অতিরিক্ত খরচ এবং সম্পদের সঠিক বণ্টন নিয়ে বিতর্ক। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রথম নয়, এর আগে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও দেশকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, সাতটি প্রদেশ করলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ হবে এবং রাজধানীর ওপর চাপ কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক . নিগার সুলতানা বলেছেন, প্রদেশে বিভক্তির প্রক্রিয়া মূলত বিকেন্দ্রীকরণ। এর মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু দায়িত্ব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের কাছে চলে যাবে। তিনি বলেন, প্রাদেশিক সরকার গঠন হলে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। ছোট প্রশাসনিক ইউনিটগুলো প্রাদেশিক সরকারকে আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেবে। ফলে, স্থানীয় সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। এর ফলে, প্রাদেশিক পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে, যা উন্নয়ন সম্পদ বরাদ্দে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, প্রদেশে বিভক্ত হলে দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং মানবসম্পদ আরও সমানভাবে বিতরণ করা যাবে, যা আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রদেশ তাদের নিজস্ব শক্তির ওপর মনোনিবেশ করে কৃষি, শিল্প বা পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন করতে পারবে, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

তবে দেশকে প্রদেশে বিভক্ত করলে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নঈম সুলতান। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আয়তনের জন্য এটি যুক্তিযুক্ত নয়। এতে করে বৈষম্য আরও বাড়বে। এছাড়া আমলাতন্ত্র আমাদের ওপর চেপে বসবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই অধ্যাপক। অনেক প্রদেশ নেই, এটা আমাদের দেশের কোনো সমস্যা নয়। আমাদের সমস্যা আমরা আমাদের দেশ, বিভাগ, জেলা, ইউনিয়ন কোনোটাই ভালোভাবে চালাতে পারছি না।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি লিখেছেন, ‘আমি সাধারণভাবে আমার লেখায় যেটা বলার চেষ্টা করেছি এবং এখনো মনে করি, সেটা হচ্ছে ভৌগোলিকভাবে এই দেশটা একটা ছোট দেশ। মানুষ হয়তো বেশি। তবে ভাষাগত, ভৌগোলিক অবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো বিভাজন নেই।বিভাজন আনা খুবই সহজ। বাংলাদেশকে মোটা দাগে একটা সমজাতিক দেশ বলা চলে, আমাদের জনসাধারণের বড় অংশটা বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাংলাতেই পড়াশোনা শুরু করে, একই ধরনের সংগীত চর্চা করে। হয়তো কারও পছন্দ ভাটিয়ালি, কারও বাউল, কারওবা আধুনিক। বেশিরভাগেরই পোশাক-আশাক একই, প্রতিটা অঞ্চলেই মুসলমান হিন্দু ধর্মাবলম্বী রয়েছে। বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা সব এলাকায় নেই। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৫০টি হলেও জনসংখ্যায় তারা অনেক কম এবং তাদের বাস মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার পটুয়াখালীর সমুদ্র উপকূল, সিলেটের চা বাগান উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়। এই সব প্রয়োজনে দেশটা চার প্রদেশে বিভাজন করা হচ্ছে না। বিভাজন করা হচ্ছে শুধু ভৌগোলিক বিবেচনায় এবং শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রীয়করণের নামে।

ছোট্ট এই দেশটাতে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের দূরত্ব খুব অল্প, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো, তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে দেশের অন্য যে কোনো অঞ্চলে চলে যাওয়া যায়। প্রতিটা অঞ্চল মোবাইল যোগাযোগের আওতাভুক্ত। তাহলে এটা এমন কি সিদ্ধান্ত হলো যা আঞ্চলিকভাবে নিয়ে প্রদেশগুলো সুবিধা পাবে? বড় বড় কেন্দ্রীয় প্রকল্প ছাড়া, এখনো অন্য সব প্রকল্পের সিদ্ধান্ত স্থানীয়ভাবে নেওয়া হয়। কখনো উপজেলা চেয়ারম্যান, কখনোবা আমলারা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। যারা উপজেলা চেয়ারম্যান বা সদস্য তারা সবাই স্থানীয় লোক।

পাকিস্তানের প্রদেশগুলো বা ভারতীয় রাজ্যগুলোর দিকে তাকালে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। তাদের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ভৌগোলিক অবস্থান তাদের বিভাজনকে স্বতঃস্ফূর্ত করেছে। আর আমাদের এখানে তা করা হচ্ছে খুবই কৃত্রিমভাবে। চার প্রদেশ গঠন করা আমাদের দেশ সমাজের সমজাতীয়তায় বিভাজন আনবে।

বাংলাদেশে দাবি-দাওয়া নিয়ে যে ঐতিহ্য আসক্তি, তাতে যে কোনো দাবি না মানলে ধারাবাহিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। প্রদেশ ঘোষণার পরপরই শুরু হবে, যারা নিজেদের জন্য প্রদেশ চাইবেন, তাদের কর্মসূচি আন্দোলন। সেটা রংপুর হতে পারে, হতে পারে সিলেট বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রামের তো স্বতন্ত্র অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছেই। নতুন প্রদেশের দাবি মানা কঠিন হবে। একজনের দাবি মানলে অন্যরাও দাঁড়িয়ে যাবে নতুন প্রদেশের জন্য।

উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা প্রদেশ দাবি তো অনেক পুরানো। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিহারীরা চেয়েছিল, খুলনা রংপুর নিয়ে একটা আলাদা প্রদেশ। স্বাধীনতার পরপর কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও চেয়েছিলেন আলাদা উত্তরবঙ্গ প্রদেশ। এক সময় ছোটখাটো একটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে। তারপর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার রংপুরের একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্যকে আরও বিস্তৃত করতে সারাদেশে আটটা প্রদেশ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির একটা গ্রুপ রাজ্যের উত্তর অংশকে আলাদা করে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির একচ্ছত্র আধিপত্যকে খর্ব করতে চাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ দুদেশের উত্তরাংশকে সংযোগ করে আলাদা রাষ্ট্র বানানোরও স্বপ্ন দেখছেন। উত্তরবঙ্গকে আলাদা প্রদেশ করে, এসব রাজনৈতিক গ্রুপগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। আমাদের জনগোষ্ঠী ভৌগোলিক সীমারেখা যতই আমরা সংহত রাখতে পারব, ততই আমরা কার্যকরভাবে প্রতিকূল হুমকি রুখতে পারব।

এরপর শুরু হবে সম্পদ ভাগ নিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। আমাদের সীমিত সম্পদ নিয়ে অঞ্চলগুলোর মধ্যে মোটামুটি সম্পদের একটা সুষম বণ্টন চলে আসছে। আমাদের আমদানিভিত্তিক অর্থনীতিতে খুব বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প বিস্তারের সুযোগ নেই। আলাদা প্রদেশ হলেই রাজনীতিবিদরা জনগণকে চমক দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জোগান দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে চাপ দেবেন। এসব অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় রূপ নিতে বেশি সময় লাগবে না।

আলাদা প্রদেশের সবচেয়ে বড় সংকট দেখা যাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় দলগুলোর মধ্যে চরম পর্যায়ের দলাদলি থাকে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রদেশে ভিন্ন ভিন্ন দলের প্রাধান্য চরম উত্তেজনা অস্থিতিশীলতার জন্ম দেবে। কেন্দ্রের সঙ্গে তিক্ততা ঠোকাঠুকি লেগেই থাকবে।

প্রতি প্রদেশের জন্য আলাদা সেক্রেটারিয়েট, নতুন আমলাগোষ্ঠী, প্রাদেশিক পরিষদ, প্রাদেশিক গভর্নর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, বিরাট মাথাভারি প্রশাসনের জন্য অর্থ জোগান দেবে দেশের আসহায় জনগণ। এই খরচ প্রতিবছর বাড়বে। কেন্দ্রীয় ট্যাক্সের সঙ্গে আবার হয়তো বসবে প্রাদেশিক ট্যাক্স। সবই বিকেন্দ্রীকরণের নামে। এই যে খরচের বোঝা, তা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। হ্যাঁ, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা গাড়ি পাবেন না? কে আটকাবে তাদেরকে নিজেদের জন্য গাড়ির আইন করতে?

ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রদেশের নদীর পানি নিয়ে সংকট উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজশাহী যদি তাদের পানি সংরক্ষণের জন্য যমুনা, আপার পদ্মায় বা মধুমতীতে বাঁধ দেয়, তাহলে নিম্নধারায় পদ্মা, মেঘনা খুলনার রূপসাতে পানি সংকট দেখা যাবে। পাকিস্তানে সিন্ধু নদীর পানি নিয়ে পাঞ্জাব সিন্ধু প্রদেশের সংকট বহু পুরানো। ভারতে গোদাবরী, কৃষ্ণ, রাভি ইত্যাদি একাধিক নদীর পানি নিয়ে রাজ্যগুলোর মধ্যে সংকট বছরের পর বছর ধরে চলছেই। প্রতিবছরই বৈঠক হচ্ছে নদী কমিশনের।

যাই করুন, দয়া করে ভেবেচিন্তে করবেন। একবার বিভাজন হলে আর একত্রীকরণ করা যাবে না বরং বিভাজন বাড়তেই থাকবে। যা আমাদের দরকার তা হলো প্রশাসনে গতিশীলতা। একটা আত্মপ্রত্যয়ী প্রশাসন পুলিশ বাহিনী। আর এমন একটা সরকার, যে সরকারের লোকজন দেশের সম্পদকে নিজেদের সম্পদ ভাববেন না। আর মানুষের কথা বলার অধিকার, নিজের দেশ সম্পদ নিয়ে তারা যেন ভয়ভীতি ছাড়া কথা বলতে পারে। ইতোমধ্যেই সরকারের সমালোচনা করে শহীদ মিনারে মানুষ মার খেয়েছে আর পত্রিকা অফিসে গিয়ে ক্ষমতাবানরা সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করতে মালিককে বাধ্য করেছেন। এই ভীতিকর পরিবেশে কোনো উদ্যোগই কাক্সিক্ষত ফল আনবে না। অনেক প্রদেশ নেই, এটা আমাদের দেশের কোনো সমস্যা নয়। আমাদের সমস্যা আমরা আমাদের দেশ, বিভাগ, জেলা, ইউনিয়ন কোনোটাই ভালোভাবে চালাতে পারছি না।

প্রথমেই বলেছি, এই চার প্রদেশ, অন্তত চারশত সমস্যার সৃষ্টি করবে। তার কয়েকটি বর্ণনা করেছি, আরও অনেকট্্াই অনুমান করতে পারছি, কিছু কিছু অননুমেয় রয়ে গেছে। তাহলে অন্য সমস্যাগুলোর কী হবে? মনে রাখবেন, সমস্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে। আর সমস্যাহীন অগ্রগতি হয় গাণিতিক হারে। একটা ভালো রাস্তা তৈরি করে আরেকটা ভালো রাস্তা করলে দুইটা রাস্তা হবে। একটা রাস্তা ভাঙাচোরা বানালে যাতায়াতের সময় বেড়ে যাবে, ১০০টা দুর্ঘটনা হবে, রাস্তার ফাঁকে পানি জমে গর্ত আরও বড় হবে, দুদকে মামলা হবে, সমস্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তেই থাকবে। অনেকটাই জুতা আবিষ্কার গল্পের মতো। রাজার পায়ে ধুলা লাগে, এই একটা সমস্যা থেকে কত সমস্যার যে উৎপত্তি হলো, মন্ত্রিপরিষদ আগে ভাবতেই পারেনি। অপ্রতুল সূর্যের আলো, জ্বর-সর্দি-কাশি-অ্যাজমা-এলার্জি, কাদা-প্যাক, পানি সংকট, মৎস্য সংকট, নৌকা পরিবহন সংকট এবং আরও কত অজানা পরিবেশগত সংকট। অকারণে অর্থব্যয়ের কথা নাইবা বললাম, সে তো হবু রাজার আমলেও হতো এবং আধুনিক রাজারাও অহরহ করেন। তাই আবারও বলছি, চার প্রদেশের বাংলাদেশ অন্তত চারশত সমস্যার মুখোমুখি হবে।  

×