![‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/200-2502081906.jpg)
.
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শনিবার থেকে গাজীপুরসহ সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করছে সরকার। শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শনিবার থেকেই গাজীপুর এলাকাসহ সারাদেশে এই অভিযান শুরু হয়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর ব্যাপারে আজ রবিবার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। শনিবার সকালে গাজীপুরের ঘটনায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের
বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতাল ঘুরে আহত ছাত্রদের খোঁজখবর নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার সাজ্জাত আলী।
তাঁরা সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢামেকের অর্থোপেডিক বিভাগ ও বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ৬ষ্ঠ তলার ৬১৭ নং ওয়ার্ডে আহতদের দেখতে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন। পরে পৌনে ১১টার দিকে তাঁরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান।
এদিকে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, যে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে চেয়ারগুলোতে বসিয়েছেন, সেই পুলিশ বাংলা সিনেমার মতো ঘটনা ঘটার পর আসে। আমরা কেন ঘটনার পর দুই ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ করে পুলিশকে মাঠে নিয়ে আসতে পারি না। যে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আপনাদের সরকারে বসিয়েছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানায় অন্তর্র্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার রাত ১টায় প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্র্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকান্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্তর্র্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
গত বুধবার শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর ওই রাতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই প্রেক্ষিতে সরকার একটি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন তাদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, হুমকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন। মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সেই ক্ষতে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এ সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অন্তর্র্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব।
তবে সরকারের এ বিবৃতির পরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর সরকার এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।