ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

মব জাস্টিস যেভাবে শুরু হয়

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:০৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মব জাস্টিস যেভাবে শুরু হয়

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ কখনো কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যায়ের মাধ্যমেই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অজুহাতে অনেক সময়ই অবিচারের পথ বেছে নেওয়া হয়। সাধারণত ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা আইনের শাসনের বাইরে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে, তারাই এই প্রবণতাকে উসকে দেয়। এর ফলে সমাজে ‘মব জাস্টিস’ বা ‘উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার’-এর সংস্কৃতি শুরু হয়, যা সামাজিক নৈরাজ্যকে বাড়িয়ে তোলে।

 

‘মব জাস্টিস’ শব্দটি এমন এক পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে উত্তেজিত জনতা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে। এটি আইনগতভাবে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করে এবং সমাজে সহিংসতা বাড়িয়ে তোলে। অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিরাও এ ধরনের গণবিচারের শিকার হয়।

মব জাস্টিস যেভাবে শুরু হয়

ঘটনার সূত্রপাত: সাধারণত চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বা হত্যার মতো অপরাধের পর জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

গুজব ও ভুল তথ্যের প্রচার: সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

উত্তেজনা বৃদ্ধি: যখন জনতা মনে করে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তখন তারা নিজেরাই অভিযুক্তের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

অভিযুক্তের ওপর আক্রমণ: উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তকে ধরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে, যা অনেক সময় মারধর, নির্যাতন বা হত্যার পর্যায়েও পৌঁছে যায়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ: অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যায়।

 

মব জাস্টিসের পরিণতি

  • নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

  • সমাজে অস্থিরতা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।

  • বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়।

  • মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।

 

মব জাস্টিস প্রতিরোধে করণীয়

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: দ্রুত ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা।     

সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণকে বোঝানো যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ।

গুজব প্রতিরোধ: সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব রোধ করতে প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ।

অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ: দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। 

স্থানীয় নেতৃত্ব ও মিডিয়ার ভূমিকা: সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি ও মিডিয়ার মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রচার করা।

যদি সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায় এবং মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারে, তাহলে মব জাস্টিসের মতো অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

তাবিব

×