বিশিষ্ট অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আসিফ সৈকত আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১ টায় তার ব্যাক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
যেখানে আসিফ সৈকত উল্লেখ করেন,একটা কথা আছে “Rude, but proper and know when to quit”. অর্থাৎ আপনি হিংস্র হলেও সঠিকভাবে হন এবং এটা জানুন যে কখন আপনাকে থামতে হবে।
পয়েন্টে আসি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,
বত্রিশ ফ্যাসিজমের দীর্ঘদিনের ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিচিত ছিল, অভ্যূতথানের পরই যা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ছাত্র জনতা কোনো এক অদৃশ্য কারনে তা সম্পন্ন করতে ছয় মাসের অধিক সময় লাগিয়ে দিল। অর্ধবছর পরে এসে ইন্টারিম যখন একটি স্ট্যাবল গভমেন্ট হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে তখন ফ্যাসিজমের আঁতুরঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়া আসলে একাডেমিক্যালি একটু অন্যরকম; তবে অবশ্যই জাস্টিফাইড।
বত্রিশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পেছনে ভিজিবল বা ইনভিজিবল কন্ট্রিবিউটর যারাই ছিলেন, তারা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ব্লেসিং। কারন তাদের জন্য অনেক গিট্টু আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করেছে।
তবে সমস্যাটা হচ্ছে ন্যারেটিভ নিয়ে..জনতার বত্রিশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পেছনে কোনো ন্যারেটিভ ছিল না। ছিল দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, রাগ, বিদ্বেষ, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তিগত কারন আবার কেউবা মুজিবকে নিয়ে সামান্য মিম বানাতে গিয়ে অত্যাচারিত হয়েছে বলে এই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। কারন যেটাই হোক, তা যৌক্তিক এবং এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
আসিফ তাঁর পোস্টে আরো উল্লেখ করেন,
কিন্তু ন্যারেটিভবিহীন জনতা যখন বত্রিশ গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করেছে তখন থেকেই এই ন্যাচারাল এন্ড জাস্টিফাইড প্রটেস্টের এডভেন্টেজ নিতে শুরু করেছে আরেকটি পক্ষ। সুদূর ফ্রান্স থেকে কেউ বত্রিশ ভেংগে সেখানে মসজিদ বানানোর উস্কানি দিচ্ছেন, কেউ আবার শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ভাংগার উস্কানি দিচ্ছেন, কেউবা এটাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রের ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। সাধারণ জনতা যেহেতু তলিয়ে ভাবতে পারেনা, তাই তারা এই বিষয়গুলোকেও ফ্যাসিবাদ বিরোধী মুভমেন্ট হিসেবেই ভাববে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে।
একাডেমিক ডিস্কাশন বলে- মবের কোনো ন্যারেটিভ থাকেনা, বরং সে শুধুমাত্র অন্যের ন্যারেটিভ সার্ভ করে কিন্তু বুঝতে পারে না কখন কিভাবে কার ন্যারেটিভ সার্ভ করে দিচ্ছে..?
ধরুন আপনি আমার বাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছেন। আমি ডিফেন্ড না করে বরং আপনাকেই খুব সূক্ষ্মভাবে উস্কে দিব যাতে আপনি আরো বাড়াবাড়ি করেন। কারন আমার তো ক্ষমতা নেই আপনার হাতুড়ির আঘাত সহ্য করার, কিন্তু আমি যদি আপনাকে দিয়ে পাশের বাড়ির দেওয়াল ভাঙ্গিয়ে নিতে পারি তাহলে মুহূর্তেই একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ দাঁড়িয়ে যাবে এবং সরলমনা আপনি বিপদে পড়বেন।ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি ঠিক এই কাজটিই করে।
লিসি ফ্রেমওয়ার্ক হলো দুইটা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,
1. Assessment Of Task
2. Assessment Of Troops Of Task
এসেসমেন্ট অব টাস্ক বলতে বোঝায়- কিভাবে কোন উপায়, কাকে প্লাস মাইনাস করে কাউন্টার ন্যারেটিভ দাঁড় করানো হবে সেটার থিওরিটিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এবং এসেসমেন্ট অব ট্রুপস অব টাস্ক হলো- সেই ফ্রেমওয়ার্কের একচুয়ালাইজেশন কাদের দ্বারা ঘটানো হবে।
ইতিমধ্যেই কিন্তু আমরা এসেসমেন্ট অব ট্রুপস অব টাস্কের একটা এক্সপিলিসিট এক্সাম্পল দেখতে পেয়েছি। সেটা হলো- বত্রিশে গরু কোরবানি করে জনতার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করার মুখপাত্র প্যাকের রাতুল এবং সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে ডেইলি স্টার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এটা থেকেই স্পষ্ট যে এসেসমেন্ট অব টাস্কের অংশ হিসেবে তারা মিডিয়া উইংকে এবং এসেসমেন্ট অব ট্রুপস অব টাস্কের অংশ হিসেবে ডেইলি স্টারকে বেছে নিয়েছে। অর্থাৎ কাউন্টার ন্যারেটিভকে এস্টেবলিস করতে তারা আবারও শাহবাগের মত আরেকটি প্যারালাল গভমেন্ট কনসেপ্টের দিকেই এগোচ্ছে।
তাহলে এই মুহূর্তে আমরা কি করতে পারি?
বত্রিশের প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রা করা ট্রেনটি ন্যারেটিভহীন হলেও পরবর্তী প্রত্যেকটি স্টেশনে থামবার সময় একেকজন নতুন ইনফিলট্রেটর এই ট্রেনে উঠে পড়েছে যাতে করে পুরো মুভমেন্টটাই ডিরেইল হয়ে যায়। আমাদের কোনো স্ট্রং ন্যারেটিভ না থাকলেও তারা এটাকে মব আখ্যা দিয়ে কাউন্টার ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এমতবস্থায় Counter of counter narrative দাঁড় করাতে না পারলে আপনিও মারা খাবেন, আমিও মারা খাব। এখন না খেলেও দশ বছর খাব। নিশ্চিত থাকেন।
তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে জনতা বত্রিশে আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্ট পেয়েছে। সেখানে পাওয়া কনস্ট্রাকশন হেলমেট, জুতা, রশি এগুলো খুবই সেন্সিটিভ ইলিমেন্ট।
আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন এক্স কমান্ডোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, এই আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্ট আগে ছিল না। এমনকি এসএসএফ এর অনেক কর্মকর্তাও এই বিষয়ে কিছুই জানেনা। তবে সেখান থেকে পাওয়া প্রতিটি ইলিমেন্টের ফরেনসিক টেস্ট হলে একটা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ এস্টেবলিস করা সম্ভব। ট্রাস্ট মি।
ছাত্ররা নিজেরা এক্সপার্টিজম বাদ দিয়ে যদি ফরেন্সিকের জন্য ইন্টারিমকে প্রেশার ক্রিয়েট করে, তারা চিন্তাও করতে পারবে না এর আউটকাম হবে আওয়ামীলীগের জন্য নাইটমেয়ার।
তবে সেগুলো করার জন্য ধৈর্য্য ধরন করতে হবে। অতি উৎসাহী হয়ে দেশের কোথাও কোনো ভাঙ্গচুর দাঙ্গা হাংগামা করা যাবেনা। আই রিপিট, বত্রিশে পাওয়া এই আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্ট দিয়েই লীগকে খেয়ে দেওয়া যাবে।
এবং প্রথমের কথাটি আবারও বলি- Rude, but proper and know when to quit.
ফুয়াদ