.
সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছিনতাই ঠেকাতে সড়কে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক সার্জেন্টদের স্মল আর্মস (হাল্কা বা ছোট অস্ত্র) দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
বৃহস্পতিবার উত্তরা আজমপুর বিডিআর মার্কেট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীতে কাউন্টার ও ই-টিকেটিং পদ্ধতিতে বাস চলাচল’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে এসব বলেন তিনি। এ সময় সড়কে যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা মহানগরীতে কাউন্টার ও ই-টিকেটিং পদ্ধতিতে বাস চলাচল (প্রথম পর্ব) শুরু করা হয়। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন্ কবির খান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম, কোষাধ্যক্ষ এ এস এম আহম্মেদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক কাজী মো. জোবায়ের মাসুদ প্রমুখ।
হাউস বিল্ডিং থেকে আব্দুল্লুাহপুর পর্যন্ত ছিনতাইয়ের প্রকোপ দেখতে পাই, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, সাম্প্রতিক ছিনতাই বেড়েছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ব্যাপক ধরপাকড়ের ফলে বহু ছিনতাইকারী আটক হয়েছে। ফলে গত ১৫ দিন ধরে ছিনতাইয়ের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে এসেছে। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং থাকবে। বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ছিনতাই করা বা অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই করার বিষয়গুলো আমার গোচরীভূত হয়েছে। আমাদের লোকবল কম। দেখা যায়- অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা কিছু করতে পারেন না। সে জন্য তাদের স্মল আর্মস (হাল্কা অস্ত্র) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নিজেরাই ২, ৪, ৫ জনকে মোকাবিলা করতে পারেন।
এ সময় গত রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা ও ভাঙচুর ঠেকাতে কী উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে? সেখানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেছি। গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজে সেখানে রিপোর্ট নিয়েছি। তবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা পাইনি।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে ২১টি কোম্পানির দুই হাজার ৬১০টি বাস যাত্রী পরিবহন করে। এখন থেকে এই বাসগুলোতে যাতায়াত করতে হলে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে বাসে উঠতে হবে। গোলাপি রঙের এসব বাসে টিকিট ছাড়া কেউ উঠতে পারবেন না। যত্রতত্র ওঠানামাও করা যাবে না। চলতি মাসে মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় যাতায়াত করা অন্যান্য রুটের বাসগুলোতেও কাউন্টার ও ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম বলেন, গত ১৬ বছর ধরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকা শহরে বাস-মিনিবাস চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করেছে। এতে রুটে গাড়ি চলাচলে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করার কারণে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই গত ১৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সডকে শৃঙ্খলা, ঢাকা মহানগরে যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়। পরে বাস মালিকদের সঙ্গে চালকের ট্রিপভিত্তিক চুক্তি না করে পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করতে নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা। সে নির্দেশনা অনুযায়ী আজ আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিট কাউন্টার স্থাপন ও ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করা হয়। আব্দুল্লাহপুর ঢাকার যেসব গন্তব্যে বাস যায়, সেসব সড়কে নির্দিষ্ট স্থানে কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন থেকে গাড়ি কাউন্টার পদ্ধতিতে চালাতে হবে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে গাড়িতে যাতায়াত করতে হবে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া গাড়ি দাঁড করানো যাবে না এবং যাত্রী ওঠানো যাবে না। যাত্রীরাও নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠবেন। চলতি মাসে আরও তিনটি রুটে (মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর) টিকেটিং পদ্ধতি চালু করা হবে। ফলে পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে চালকদের ওপর চাপ কমবে। সড়কে অনেকাংশে শৃঙ্খলা ফিরবে। আর এ কাজটি বাস্তবায়নে পরিবহন চালক ও শ্রমিকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।