ছবিঃ সংগৃহীত
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি মূলত ক্ষমতায় থাকা এবং শক্তি প্রয়োগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ২০০৯ সালের পর থেকে তাকে শাসক হিসেবে যা করা উচিত তা না করে, রাজনীতিকে এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে নিয়ে গিয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। যেমন, খালেদা জিয়ার বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া, জামায়াতের নেতাদের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি বুলেট এবং সহিংসতার ব্যবহার।
অন্যদিকে, ১৯৯০-এর পরবর্তী প্রজন্মের ধারণা পুরোপুরি ভিন্ন। যারা ২০০০ সালের আশেপাশে জন্মেছেন, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর চিত্র অনেকাংশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তারা “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগানকে শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে সরকারের রাজনৈতিক আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদী শাসনের চিহ্ন। এই প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং বর্তমান সরকারের শাসন ব্যবস্থার আওতায় তার ছবি, চিহ্ন, এবং নামও এক ধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার শাসনের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যেখানে সরকারির শাসন পদ্ধতি অনেকটা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেছে। কিছু বিশেষ শ্রেণি বিশেষভাবে ভারতীয় রাজনৈতিক আদর্শে প্রভাবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সত্ত্বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। এমনকি, আওয়ামী লীগ নিজেও রাজনীতিতে ‘ভক্তি’ এবং ‘উৎসর্গের’ অনুভূতি গড়ে তুলেছে, যা অনেকের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও আদর্শ একটি মিশ্রিত প্রতীক হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই প্রজন্ম, যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেখে বড় হয়েছে, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূলত এই প্রজন্মের মনোভাবের ওপর নির্ভর করবে। যদি প্রজন্মের এই বিভাজন সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও বড় অন্ধকার নেমে আসবে। অতীতে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যে শ্রদ্ধা ছিল, তা একদিন হয়তো সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে, আর নতুন প্রজন্মের কাছে সেগুলো শুধুমাত্র এক ইতিহাসের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/p/14PTXUMM9F/
মারিয়া