ছবিঃ সংগৃহীত
শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়িটি ধ্বংস করা এবং আইন্নাঘর ধ্বংসের মধ্যে কোনো তুলনা করা উচিত নয়। শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর বাড়ি যা এখন একটি স্মৃতিস্মারক, তার ধ্বংস আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের অবমাননা হতে পারে। তবে, আইন্নাঘর ছিল একটি গোপন বন্দিশিবির, যেখানে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে অনেক নিরীহ মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল, এবং তার ধ্বংস তদন্তের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এটা স্পষ্টভাবে বলছি: ৩২ নম্বর বাড়ি ধ্বংসের কোনো দায় শেখ হাসিনার একক নয়, তবে এর পেছনের ইতিহাস বুঝতে হবে। এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যেখানে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে।
জনগণের এই ক্ষোভ শেখ হাসিনার শাসন এবং তার বিকৃত ইতিহাসের কারণে তৈরি হয়েছে, যা তারা বারবার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায়, কিন্তু হাসিনা একগুঁয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, তারা এই সব ধ্বংসের দিকে এগিয়ে গেছে।
বুলডোজার মিছিল এবং হাসিনার বক্তৃতা
ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫ তারিখে, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি যৌথ ঘোষণা করে, যাতে শেখ হাসিনা ছাত্রদের উদ্দেশে একটি ফেসবুক লাইভ বক্তৃতা দিবেন। তবে, ছাত্রনেতারা এবং অনেকে ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে এর ধ্বংসের ডাক দেন। তারাও এই বাড়িটিকে "ফ্যাসিবাদের পুণ্যভূমি" হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
মাঝে কিছু বাধা-বিপত্তি, সেনাবাহিনীর কিছু প্রতিবন্ধকতার পর, রাত ১২টার দিকে ধ্বংস কার্যক্রম শুরু হয়। একদিকে যখন হাসিনা তার ফেসবুক লাইভে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন আরেকদিকে লাখ লাখ মানুষ ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙতে শুরু করে।
হাসিনার বক্তৃতা: ইতিহাস এবং বর্তমানের বিশ্লেষণ
হাসিনা তার বক্তৃতায় একবার আবার ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর পরিণতির কথা তুলে ধরেন, যেখানে তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। এরপর তিনি তার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো নিয়ে কথা বলেন, তবে ছাত্রদের হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি কখনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। বরং ছাত্রদেরকেই দায়ী করে দিয়েছেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেছেন, “আমি শুরুতে ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্তে সন্দিহান ছিলাম, কিন্তু হাসিনা যখন বক্তৃতা দিলেন, তখন বুঝলাম এটি ঠিক কাজ ছিল।”
এটাই বাস্তবতা। হাসিনার অসংবেদনা, জনগণের প্রতি তার চরম অবজ্ঞা, এবং ইতিহাসের বিকৃতি তাদেরকে এই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের পতন এবং জনগণের অভ্যুত্থান
শেখ হাসিনার শাসন কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদী শাসনই নয়, বরং এটি ছিল একটি মাফিয়া রাজ্য, যেখানে তার নিজের পরিবার এবং একদল লোকজন জনগণের সম্পদ লুটে নিয়ে শাসন করছিল। আওয়ামী লীগ, যা নিজেকে 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র প্রকৃত উত্তরাধিকারী হিসেবে দাবি করেছিল, সেই দলই মুজিবকে দেবতার মতো পূজা করেছিল এবং দেশটির সব ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিকৃত করতে চেষ্টা করেছে।
এই সংস্কৃতির শোষণের ফলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে, এবং জনগণ একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগের শাসনের প্রতীকগুলো ধ্বংস করতে শুরু করেছে। এটি একটি সশস্ত্র প্রতিরোধের মতোই, যেখানে মানুষ তাদের নিজস্ব ইতিহাস, স্বাধীনতা এবং চেতনা রক্ষা করতে চেয়েছে।
প্রথমদিকে, মুজিবের প্রতিমূর্তি ভাঙা বা তার পরিবারের স্মৃতি ধ্বংস করার প্রতীকী কাজটি ছিল প্রতিবাদ, কিন্তু একে একে জনগণ বুঝতে পেরেছে যে এই সংগ্রাম আরও বড় কিছু। এটি একটি রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়, যেখানে জনগণ তাদের নিজের স্বাধীনতা এবং শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ: এক নয়া দিশা
তবে, হাসিনা এখন শুধুমাত্র তার দল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে ফেলছেন না, বরং তিনি দলের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন। জনগণের ক্ষোভ, তার শাসনকালের দুর্নীতি এবং অন্যায়ের কারণে আওয়ামী লীগ সম্ভবত আগের মতো আর জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকতে পারবে না।
হাসিনা নিজের কবর খুঁড়ে ফেলেছেন, এবং তার দলকে সেই কবরের মধ্যে দাফন করছেন। তাকে আর কেউ ক্ষমা করবে না, তার শাসনকাল শেষ হয়েছে। জনগণ উঠে দাঁড়িয়েছে, এবং একে একে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতীকগুলো ভেঙে ফেলছে।
এই মুহূর্তে, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, এবং তার দল এক ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
©আবু জাকের
তথ্যসূত্রঃ https://en.banglaoutlook.org/editors-pick/235435?sfnsn=wa
মারিয়া