প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন
দুই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা কী করলাম না করলাম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এটা দিয়ে আমাদের বিচার করবে। জাতির জন্য এটা বিরাট সংবাদ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় পুস্তক, এটা থেকে যাবে। জাতি যেদিকে যাক না কেন এটা রেফারেন্স থেকে যাবে। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দু’জন চেয়ারম্যান এবং কমিশনের সব সদস্যকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এ সময় কমিশন প্রধান ও সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই দুটো সংস্কার কমিশন হলো এমন জিনিস, বাংলাদেশের হেন নাগরিক নাই যে এটাতে টাচড হয়নি। অন্য কমিশনের অনেক বড় বড় জিনিস থাকে কিন্তু সরাসরি টাচড হয় না। ইনডাইরেক্টলি হয় কিন্তু এটা সরাসরি। আপনি দরিদ্রতম ব্যক্তি হতে পারেন, ধনী হতে পারেন, মাঝের লোক হতে পারেন এই দুটি থেকে মুক্তি নেই। এই দুটির সঙ্গে আপনাকে সম্পৃক্ত হতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অভিজ্ঞতা, দেশের যে অভিজ্ঞতা এটা হলো হেনস্তার অভিজ্ঞতা। অপমানের, অবমাননার অভিজ্ঞতা। নাগরিক হিসেবে আমাদের যে একটা দাবি আছে অধিকার আছে সেটা ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। নতজানু হওয়ার অভিজ্ঞতা। এখানে যে আশার কথা শুনিয়েছেন যে সংক্ষিপ্তসার যেটা আমাদের দিলেন সেটাতেই এত আশা জাগায় যে হয়তো আমরা এটা থেকে মুক্ত হব। আমরা সত্যিকারভাবে নাগরিক হিসেবে অধিকার ফিরে পাব। এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এই রিপোর্টের মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘এই রিপোর্টটা আমরা সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হিসেবে জনগণের হাতে দিয়ে দেব এবং রাজনৈতিক দলের হাতে দিয়ে দেব। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে দিয়ে দেব। যাতে করে তারা একমত হতে পারে যে এগুলো করে ফেলা ভালো। সবাই যেন মনে করে ঠিক কথা বলেছেন, প্রাণের কথা বলেছেন। কারণ আমি তো ভুক্তভোগী। আমাদের তো প-িত হতে হবে না এটা বোঝার জন্য। আমাকে যে হেয়প্রতিপন্ন করা হয় প্রতিদিন এটার থেকে এটি মুক্তি দেবে।’
প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আশা করছি এটা সবাই একান্ত মনে গ্রহণ করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। কমিশন প্রধান ও সদস্যদের তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আপনাদের একাডেমিক জ্ঞান সবকিছুর সংক্ষিপ্তসার করে এখানে এই রিপোর্টে এসেছে। সেইসঙ্গে আপনারা বহুজনের সঙ্গে কথা বলেছেন সেগুলোও এখানে এসেছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা স্মরণীয় পুস্তক। এটা থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী করলাম না করলাম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এটা দিয়ে আমাদের বিচার করবে। আপনারা তো পেয়েছেন, আপনারা করেন নাই কেন, এটা বলতে পারবে। এটা এমন না যে আপনারা জানতে না বলে করেন নাই, জানিয়ে তো দিয়েছে, বইতে সব বলা আছে। কাজেই এই ফসল এটা জাতির জন্য একটা স্মরণীয় বিষয়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এটাও বলছি এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য অবদান না বিশ্বের জন্যও অবদান। কারণ সব জাতিকে এটা ফেস করতে হবে, ফেস করতে হয়। যারা এটা নিয়ে চিন্তা করবে কী বাদ গেল এটা পড়ার পর মনে হবে এটা তো আমরা করতে পারতাম।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমার একটা অনুরোধ থাকবে এই পদ্ধতি শেষ হওয়ার পরে বা এর মধ্যেই এটার ইংরেজি অনুবাদ হয়ে যাওয়া। কারণ বিশ্বের দরবারে যেতে গেলে বিশ্বের ভাষায় এটা আমাদের নিয়ে আসতে হবে। এই কষ্টের ফসলটা সারা পৃথিবীর প্রাপ্য। শুধু বাংলাদেশের না। তারা তাদের কনটেক্সটে বিচার করবে কিন্তু জিনিস একই, ইস্যু এক। তারা তাদের মতো দেখবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আজকে আমরা যে দুটো ভলিউম আমরা গ্রহণ করছি রিপোর্ট হিসেবে এটা পৃথিবীর সম্পদ হিসেবে জাতির সম্পদ হিসেবে আমরা গ্রহণ করলাম। আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ এ কাজটুকু করে দেওয়ার জন্য। আপনারা ইতিহাসে স্থান করে নিলেন।’