ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টায় মরিয়া মাস্টারমাইন্ড এর মুখোশ উন্মোচন করলেন জুলকার নাইন সায়ের

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টায় মরিয়া মাস্টারমাইন্ড এর মুখোশ উন্মোচন করলেন জুলকার নাইন সায়ের

বিশিষ্ট প্রবাসী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) তাঁর ব্যাক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় বিকাল আনুমানিক সময় বিকাল ৪ টা ৪০ এ ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টায় মরিয়া মাস্টার মাইন্ডকে নিয়ে  একটি পোস্ট করেন।

পোস্টে  জুলকার নাইন সায়ের উল্লেখ করেন, এই কুশল বরণ চক্রবর্তী এখন কোথায়? চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টায় মরিয়া মাস্টার মাইন্ড কে?

কুশল এর ছবির সাথে ২০২২ এর ২৫ জুন এর একটি পোস্ট উল্লেখ করেন,যেখানে উল্লেখ করেন,ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ” (আরএসএস) একটি জঙ্গি সংগঠন ও বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের মদদদাতা; বাবরী মসজিদ ধ্বংস, স্বর্ণ মন্দিরে (শিখ ধর্মস্থান) সেনা অভিযানে যোগদান , ২০০৭ সালে পাকিস্তানগামী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে, ২০০৮-এ চার্চে আক্রমণ এবং ২০১২ তে গুজরাট দাঙ্গায় এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

জঙ্গি সংগঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,এই জঙ্গি সংগঠনটির সিনিয়র নেতা স্বামী অসীমানন্দ যিনি; ২০০৭ সালের ১৮ মে জুমার নামাজের সময় হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণ যাতে ৯ জন মুসল্লী প্রান হারান, পরবর্তীতে একই বছরের ১১ অক্টোবর আজমীর শরীফে মইনুদ্দিন চিশতীর মাজারে বোমা বিস্ফোরণ যাতে নিহত হন তিনজন, ২০০৭ সালে পাকিস্তানগামী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা হামলা করে হত্যা করে ৬০ জনকে এবং ২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ এবং ৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ মালেগাঁও মসজিদে সিরিজ বোমা হামলায় যে ঘটনায় মারা যান প্রায় ৫০ জন, এই প্রত্যেকটি ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছিলো ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তারা এও বলেছিল যে সকল অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে স্বামী অসীমানন্দ নিজেই ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারাক্তি দিয়েছেন এবং তিনি এও বলেছিলেন যে, ২০০৬ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের নেপথ্যে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুনীল যোশি।

জুলকার নাইন তাঁর পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, এনআইএ স্বামী অসীমানন্দ ওরফে নবকুমার সরকারকে এ সকল মামলার অন্যতম প্রধান আসামী করলেও পরবর্তীতে “উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের” (?!) অভাবে ছাড়া পেয়ে যান অসীমানন্দ সহ অন্যান্য সন্দেহভাজন জঙ্গিরা।

২৫ শে মার্চ এর কথা উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেন,২৫শে মার্চ ২০১৭ ইন্ডিয়াটুডে’তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সুনীল যোশী আজমীর শরীফে হামলার এর বছর আগে ২০০৬ সালে যোগাযোগ করেছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথের সাথে, যিনি বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।

পোস্টে তিনি আরো বলেন, আরএসএসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এই যোগী আদিত্যনাথ বিভিন্ন সময় মুসলমানদের কটাক্ষ করেছেন ও বিভিন্নভাবে হুমকিও প্রদান করেছেন এমনকি সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে ঈদের নামাজ রাস্তায় ও মাঠে ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ এমনকি শব্দ দূষণের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন মসজিদের ১ লক্ষ মাইক জব্দ করে তা বিক্রিও করে দিয়েছেন তিনি, আরএসএস আদিত্যনাথ’কে হিন্দুত’ভার “ ব্র্যান্ড” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সময় কি কি মন্তব্য করেছিলেন তা উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেন এই হিন্দুত্ববাদী নেতা বিভিন্ন সময় কি কি মন্তব্য করেছিলেন তা একটু জেনে নেয়া যাক-

*উত্তর প্রদেশে ২০০৫ সালে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হচ্ছে ততক্ষণ আমি থামব না।’

* ২০১৫ সালে আদমশুমারির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে আদিত্যনাথ বলেন, ‘মুসলিমদের জন্যই গণতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।’

* অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করায় তাঁর রোষানলে পড়েন বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান। ২০১৫ সালে ৪ নভেম্বর তিনি বলেছিলেন, ‘শাহরুখ খানের মনে রাখা উচিত যে মানুষ যদি তাঁর ছবি বয়কট করে, তবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অপর মুসলমানদের সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্য থাকবে না। আমি মনে করি, শাহরুখ খান এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হাফিজ সাঈদের কথার বলার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’

* যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ভারতের কোনো রাজ্যে যদি হিন্দুরা নাজেহালের শিকার হয়, তাহলে আমরা তা মেনে নেব না। যদি কেউ আমাদের ছুতে চেষ্টা করেন, তবে এর ফল ভোগ করতে হবে।

* ২০১৫ সালে বারানসির একটি অনুষ্ঠানে আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘যারা সূর্য নমস্কার করে না, তাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত কিংবা সমুদ্রে ডুবিয়ে মারা উচিত। আর তা না হলে বাকি জীবনটা তাদের অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখা উচিত।’

* ২০১৬ সালে ১৬ জুলাই উত্তর প্রদেশে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতীয়দের খ্রিষ্টান করার পেছনে মাদার তেরেসার ষড়যন্ত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেবা করার নামে হিন্দুরা তাই ধর্ম পরিবর্তন করে নিচ্ছে।’

এখন চলুন পুরো বিষয়টা আমরা একটু ঘুরিয়ে দেই, ধরুন উপরে উল্লিখিত সকল ব্যক্তিরা কোন অন্য ধর্মের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত এবং অন্যধর্মের বিশ্বাসীদের প্রতি তারা এমন ধারনা প্রকাশ করেন এবং একই ধর্মের বাংলাদেশের কোন এক সরকারী/বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিদেশে গিয়ে এই সংগঠন সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে দেখা করে আবার দেশে ফিরে আসলেন।

এই বিষয়টি জানাজানি হলে কি হবে?

তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন, নিরাপত্তা সংস্থা তাকে গ্রেফতারও করতে পারে, সামাজিকভাবে অনেক হেনস্তার শিকার হতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাহলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী কিভাবে ভারতের দুই শীর্ষ আরএসএস সদস্য যোগী আদিত্যনাথ ও কেশব প্রসাদ মৌর্য্যের সাথে গলায় গলায় ভাব রাখার পরেও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ছেন না?

শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর প্রায় সকল পোস্টেই হিন্দুত’ভা বাস্তবায়নের প্রচ্ছন্ন ইংগীত থাকে, তিনি যে আরএসএসের একজন একনিষ্ঠ কর্মী সেটাও আমরা বেশ বুঝতে পারছি, তাহলে কেন তার বিরুদ্ধে কোন তদন্তের প্রশ্ন এখনো কেউ তোলেনি?

ফুয়াদ

×